শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: আরজি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্য তথা দেশজুড়ে আন্দোলনের ঝড় উঠেছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে চাপে রাখতে বিরোধীরা যখন আন্দোলনের পালে হাওয়া দিচ্ছে তখন কোচবিহার (Coochbehar) থেকে কার্যত ‘বেপাত্তা’ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik)। ভোটে হেরে যাওয়ার পর থেকে তিনি এখন কোথায় রয়েছেন তা দলের নীচুতলার কর্মীরা তো বটেই এমনকি দলের বিধায়কও জানেন না। দলীয় নেতৃত্বের কাছেও নিশীথ ঠিক কোথায় আছেন তা স্পষ্ট নয়। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর দিনকয়েক তিনি কোচবিহারে ছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে নিশীথকে আর কোচবিহারে দেখা যাচ্ছে না। কোচবিহারে বিজেপির (Coochbehar BJP) আন্দোলন কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। বাড়িতেও নেই। ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের পাশে যেভাবে থাকা উচিত ছিল, সেভাবে তাঁকে দেখা যায়নি।
আরজি কর ইস্যুতেও কোচবিহারে আন্দোলনে নিশীথ অনুপস্থিত। এখানে তাঁকে আন্দোলনে দেখা যাবে কি না তাও অজানা। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে বিজেপি কোচবিহারে পথে নেমেছে। কিন্তু সেখানেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে না।
আরজি করের ঘটনা নিয়ে টেলিফোনে নিশীথকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কোচবিহারে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়েও বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে নিশীথ বলেছেন, ‘আমি গত দু’দিন ধরে কলকাতায় আন্দোলনে রয়েছি।’ কোচবিহারে তাঁর কোনও কর্মসূচি রয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘কোচবিহার বা দিনহাটাতেই আমাকে আন্দোলন করতে হবে এমন কোনও কথা আছে নাকি? ওখানে আমার আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে কি না তা আগে থেকে বলা যাবে না। আন্দোলন হলে নিশ্চয়ই দেখতে পারবেন।’
ভোটের পর থেকে প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রীর অন্তর্ধান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি বলেছেন, ‘নিশীথ প্রামাণিক তো কখনোই সাধারণ মানুষের জন্য আন্দোলন করেননি। ভোটে হেরে তিনি এখন বিজেপিতে গুরুত্বহীন। তাই তাঁকে এখানে দেখা যাচ্ছে না। বিজেপির বাকি যে নেতাদের আরজি কর ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা রাজনীতি করার জন্য এসব করছেন।’
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে কোচবিহারে প্রতিদিনই আন্দোলন চলছে। সাধারণ মানুষ যেমন আন্দোলনে নেমেছেন তেমনি রাজনৈতিক সংগঠনগুলিও পিছিয়ে নেই। রোজই বিভিন্ন সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। বিজেপির তরফেও পথ অবরোধ, বিক্ষোভ, থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি হয়েছে। আন্দোলন করতে গিয়ে কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে সহ বিজেপির একাধিক জনপ্রতিনিধি ও জেলা নেতৃত্ব গ্রেপ্তার হয়েছেন। শাসকদলও প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয়েছে। কিন্তু কোচবিহারের কোনও আন্দোলনেই প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথকে দেখা যায়নি। দলীয় নেতৃত্বও বলতে পারছে না কেন নিশীথ কোচবিহারে আন্দোলনে নেই। দলের বিধায়ক নিখিল বলেছেন, ‘নিশীথ প্রামাণিক কোচবিহারে রয়েছেন নাকি অন্য কোথাও রয়েছেন তা জানি না। আমাদের কাছে কোনও খবর নেই। এসব না জেনে তো মন্তব্য করা মুশকিল।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা নির্বাচনে হারের পর নিশীথ দলের অন্দরে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। নিশীথের ‘ঔদ্ধত্য’ ও ভোট পরবর্তী হিংসায় সেভাবে কর্মীদের পাশে না থাকায় তাঁর ভূমিকা নিয়েও দলের মধ্যে অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্য নেতৃত্বও এই ব্যাপারে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে হারানো মাটি ফিরে পেতে কোচবিহারে দলীয় কর্মসূচিতে নিশীথকে আবার কবে দেখা যাবে সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।