দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার : কোচবিহার রাজবাড়ির মিউজিয়ামে অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল গ্যালারির দুটি ঘর বছর দুয়েক ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ২৫ টাকার টিকিট কেটেও মিউজিয়ামের পুরোটা ঘুরতে পারছেন না পর্যটকরা। স্বাভাবিকভাবেই হতাশ তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সুপারিন্টেন্ডেন্ট হরিওম সরণ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিটেন্ডেন্ট নীতীশ সাক্সেনাকে ফোন করা হলে তাঁরা প্রশ্ন শুনে ফোন কেটে দেন। পরে ফের ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন তোলেননি। আরেক আধিকারিক সাদ্দাম লস্করকে ফোন করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। যেকারণে তাঁদের বক্তব্য মেলেনি।
অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল গ্যালারির ওই ঘর দুটিতে টোটো, মেচ, লেপচা সহ বিভিন্ন জনজাতির দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত মাছ ধরার সামগ্রী, চাষের জিনিসপত্র, তাদের অস্ত্রশস্ত্র থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিল। দ্রুত ঘর দুটি খোলার দাবি জানিয়েছেন কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক তথা জেলা হেরিটেজ কমিটির সদস্য অরূপজ্যোতি মজুমদার। তিনি ক্ষোভের সুরেই বলেন, ‘জনজাতির সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত যে কোনও সামগ্রী মিউজিয়ামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাজবাড়ির ওই ঘরগুলি গত দু’বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। এবিষয়ে আধিকরিকরা কোনও পদক্ষেপ করছেন না, এটা অত্যন্ত দুঃখের এবং আশ্চর্যের।’
বছর দুয়েক ধরে গ্যালারি দুটি বন্ধ থাকলেও ভেতরের বারান্দায় যাওয়ার জন্য দরজা কয়েক মাস আগেও খোলা ছিল। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সেই রাস্তাও এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্যালারি দুটি আদৌ ভবিষ্যতে খোলা হবে কি না, সে বিষয়েও রাজবাড়ির কেউই স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারছেন না। কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, ওই দুই গ্যালারিতে যেসব জিনিসপত্র ছিল, সেগুলির অধিকাংশরই এখন আর অস্তিত্ব নেই। কেউ আবার বলছেন, সংস্কারের জন্য ঘর দুটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ওই ঘর দুটি তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যদি ঘরগুলির সংস্কার করা হত, তাহলে সেগুলি কেন তালাবন্ধ করে রাখতে হল? এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে কোচবিহারের সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
রাজবাড়ির অপরূপ সৌন্দর্যের টানে আজও আশপাশের জেলা এমনকি দেশ-বিদেশ থেকেও প্রচুর পর্যটক সেখানে আসেন। দু’বছর থেকে মিউজিয়ামের দুটি ঘর বন্ধ রাখায় বিভিন্ন জনজাতির ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকরা। যা নিয়ে অসম থেকে আসা পর্যটক বিরাজ রায় বলেন, ‘এরকম একটি দর্শনীয় স্থানে ঘরগুলি বন্ধ থাকা ঠিক নয়। পর্যটকরা স্থানীয় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছেন না। অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’