শুভজিৎ চৌধুরী ও বাণীব্রত চক্রবর্তী, ইসলামপুর ও ময়নাগুড়ি : প্রেমের ফুল ফুটেছিল। বিয়ের ফুল ফোটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ছাঁদনাতলায় যাওয়ার বদলে যুগলের দেহ গেল হাসপাতালের মর্গে। তরুণের পরিবারের দাবি, দরজা ভেঙে দুজনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে তরুণের বাড়িতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃত দুজনের নাম শ্রীনাথ শর্মা (২৩) ও জ্যোতি শর্মা (২২)। জ্যোতির বাপের বাড়ি ময়নাগুড়ির রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানকার কানিরঘাট গ্রাম থেকে তাঁকে সোমবার ইসলামপুর ব্লকের মাটিকুন্ডা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকুন্ডায় নিজেদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল শ্রীনাথের পরিবার।
শ্রীনাথের বাবা আনন্দ শর্মা জানান, বাড়িতে আনার কিছুক্ষণ পর খোঁজ করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, যে ঘরে শ্রীনাথ ও জ্যোতি ছিল, তার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তিনি বলেন, ‘অনেক ডাকাডাকির পরেও সাড়া মেলেনি। তখন আমরা দরজা ভাঙতে বাধ্য হই। এরপর ঘরে ঢুকে দেখি দুজনে একসঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।’ সোমবার রাতে সেই খবর পৌঁছেছে ময়নাগুড়িতে জ্যোতির বাপের বাড়ির গ্রামে।
ওই এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য গুরুদেব রায় জানালেন, ‘জ্যোতির পরিবারকে এখনও জানানো হয়নি।’ তাঁর কাছে জানা গেল, কানিরঘাট গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ শর্মার মেয়ে জ্যোতি গত শনিবার নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তবে শ্রীনাথ ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন জ্যোতিকে নিয়ে নারায়ণের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এক বছর পর জ্যোতির সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল শ্রীনাথের পরিবার।
গুরুদেব জানালেন, নারায়ণের পরিবার সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি। তারপর জ্যোতিকে নিয়েই ফিরে যান শ্রীনাথের বাড়ির লোকেরা। তিনি সোমবার বলেন, ‘রাতে এই দুঃসংবাদ পেলাম।’ শ্রীনাথ ও জ্যোতি কেন নিজেদের জীবন শেষ করে দিলেন, সেটা নিয়ে রহস্য থেকেই গিয়েছে। তরুণীকে বাড়িতে নিয়েই এসেছিল তরুণের পরিবার। তারপর কী এমন হল, তার কোনও ব্যাখ্যা কোনও তরফেই মেলেনি। ইসলামপুর থানার আইসি হীরক বিশ্বাস শুধু বলেছেন, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তরুণটির গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওই তরুণ-তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে শ্রীনাথের পরিবার তাঁর জন্য পাত্রী খুঁজছিল।’ রশিদের কাছেই জানা গেল, শনিবার দেখা করার জন্য শ্রীনাথকে শিলিগুড়িতে ডেকে নিয়েছিলেন জ্যোতি। সেই খবর পেয়ে রবিবার তরুণটির বাড়ির লোকজন শিলিগুড়ি যান। সোমবার সকালে দুজনকে সঙ্গে নিয়ে সরকুন্ডা গ্রামের বাড়িতে ফিরেও আসেন তাঁরা।
পুলিশ দুজনের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ইসলামপুর থানার আইসি হীরক বিশ্বাস বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্কের কারণে দুজন আত্মঘাতী হয়েছেন।’
মৃত তরুণের বাবা আনন্দ বলেন, ‘মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়নি। এরপর মেয়েটি মরে যাবে বলে আমার ছেলেকে হুমকি দেয় বলে জানতে পারি। তখন আমার ছেলে ওই মেয়েকে ওর বাড়িতে রাখতে যায়। কিন্তু ওর বাড়ির লোক মেয়েটিকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে আমার আত্মীয়রা ছেলে ও মেয়েটিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন।’