দিনহাটা: তৃণমূলের দিনহাটা-২’র প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মির হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে চায়ের আসর বসেছিল সোমবার বিকেলে। সেই আসরে যোগ দেন কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং তাঁর অনুগামীরা। যা নিয়ে কোচবিহারের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চর্চা।
কয়েকদিন আগের কথা। দিনহাটার সংহতি ময়দানে স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নিজের জয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন উদ্বোধনের সেই মঞ্চ থেকে। দিনহাটার মানুষদের ওপর তাঁর ভরসা নেই, বলে অভিমানী মন্তব্য করেছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। যা নিয়ে জেলা রাজনীতিতে কম জলঘোলা হয়নি। উদয়নের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারকে নিশানা করতেও দেখা যায় বিরোধী শিবিরকেও। এরপর সোমবার হুমায়ুনের বাড়িতে রবি গোষ্ঠীর আগমনে জল্পনা আরও বেড়েছে।
সোমবার বিকেলে দিনহাটা বিধানসভার গোবড়াছড়া নয়ারহাটে বসে চা যোগে আলোচনা সারলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়, খোকন মিয়াঁ, পরিমল বর্মন প্রমুখ। এদিন বিকেল চারটা নাগাদ প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মির হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে পৌঁছান তাঁরা। এরপর তাঁরা যান ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম নেতা বামনহাট-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পোয়াতুরকুঠির প্রবীণ মনসুর আলি মিয়াঁর বাড়িতে।
কিন্তু হুমায়ুন-রবি সাক্ষাৎ এত তাৎপর্যপূর্ণ কেন? আসলে এককালে উদয়ন এবং রবি-অনুগামী কবিরের কোন্দলে জেরবার ছিল জেলা তথা রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কড়া বার্তা মেলার পর গত বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোন্দল ভুলে একসঙ্গে কাজ করে দুই গোষ্ঠী। পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটতে না মিটতেই ফের কোন্দল চরমে। বসে যান বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতারা। জেলার ছবিটাও একই।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দিনহাটা-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব রয়েছে রবি গোষ্ঠীর। এই পরিস্থিতিতে জেলায় বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত নেতাদের সাক্ষাৎ শুধুই সৌজন্যের। নাকি এর পেছনে রয়েছে বিশেষ সমীকরণ? চর্চা চলছে। উদয়নের ‘আশঙ্কা’ সত্যি হয় কিনা, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে এ বিষয়ে উদয়নের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের দিনহাটা-২ ব্লক সভাপতি দীপক ভট্টাচার্যও পরে বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। স্থানীয় অঞ্চল, ব্লক নেতৃত্ব নাকি জানত না।
যদিও সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর হিসেবি মন্তব্য, ‘সব কিছুতে রাজনীতি খুঁজলে হবে? সবার উপরে মানবতা এবং সৌজন্য। মনসুর সাহেবের মধ্য দিয়েই ছিটমহল ইস্যু রাজ্য তথা দেশের দরবারে পৌঁছে গিয়েছিল। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্যে এবং দীর্ঘ আন্দোলনে গণতান্ত্রিক অধিকার পান ছিটমহলের বাসিন্দারা।’ তাঁর সংযোজন, ‘মনসুর সাহেব অসুস্থ। তাই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই এসেছিলাম।’ তাহলে মির হুমায়ুন কবিরের বাড়ি যাওয়ার কারণ কী? বললেন, ‘অনেকদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। এলাম, দেখা করলাম, চা জলখাবার খেলাম। এটুকুই।’