Friday, January 17, 2025

বই-বৈঠক

বই কেন পড়ব

বহুবার পড়েছি বকুলকথা

অঙ্কিতা চৌধুরী

বহুদিন আগে এক আত্মীয়ের মুখে শুনেছিলাম, তিনি ছোটবেলায় মেয়েকে খেলনার বদলে ব‌ই কিনে দিতেন। সেই একরত্তি মেয়ে ব‌ই কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেললেও বাবা-মা তাকে কখন‌ও বকাঝকা করেননি। তাঁদের দাবি ছিল, এভাবে ব‌ই ছিঁড়তে ছিঁড়তে একদিন সেই খুদে ব‌ইকে ভালোবাসার এবং ব‌ই যত্নে রাখার কৌশল রপ্ত করে ফেলবে। না, আমাদের ছোটবেলায় বাবা-মাকে এরকম কোন‌ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়নি। কিংবা তখনও শুনিনি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সেই কথাগুলো – ‘বেছে বেছে যত পার/বই পড়ে ফেলা চাই।’ আমরা যারা আট-নয়ের দশকের তাদের ছোটবেলায় দুটো প্রশ্নের উত্তর প্রায় এক‌ই ছিল। বড় হয়ে কী হতে চাও? ডাক্তার হতে চাই, কারণ গরিব-দুঃখীদের সেবা করতে চাই। আর শখ বা হবি কী? ব‌ই পড়া আর ছবি আঁকা। ব‌ই আদৌ পছন্দ করি কি না বা ব‌ই পড়তে ভালো লাগে কি না-  সেসব বিবেচনা তখন নেহাতই তুচ্ছ। ‌নতুন স্কুলে গিয়ে যেমন অচেনা কারও পাশে বসে ক্রমে সখ্য তৈরি হয়েছে, বইয়ের সঙ্গেও ঠিক তেমনই। সেই সুবাদে ঠাকুমার ঝুলি থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প পড়েছি। একই বই বেশ কয়েকবার পড়া হয়ে যেত। এভাবেই একদিন সঙ্গী হয়ে গেল শুকতারা, যা সঙ্গ দিয়েছে বহু বছর।

এরপর জন্মদিনে উপহার হিসেবে হোক বা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে- বই পেলে বেশ ভালো লেগেছে। তখন মনে হয়েছে, এর সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যেতে পারে। ক্রমে বই পড়ার তালিকায় প্রোমোশন হয়েছে। সেই ছোটদের গল্প থেকে সুচিত্রা ভট্টাচার্যে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে শুধু বই নয়, যে কোনও খবরের কাগজের রবিবারে প্রকাশিত গল্প, ম্যাগাজিনের গল্প, যাই পেতাম পড়ে ফেলতাম। পরিচিত দুনিয়ার বাইরেও যে একটা বিপুলকায় জগৎ রয়েছে সে বিষয়ে জানতে পারতাম।

গ্র্যাজুয়েশনের অনার্সে একটি পেপার উপন্যাসের ওপর ছিল। সেই সুবাদে বেশ কয়েকটি বই পড়া হয়েছে। এরমধ্যে আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রতিশ্রুতি একটি। এই ট্রিলজির ‘বকুলকথা’ তো অসংখ্য বার পড়েছি। আর পুজো সংখ্যার কথা তো না বললেই নয়। যতই হাতে স্মার্টফোন থাকুক না কেন, এর আমেজ আলাদাই।

ফোনে বা ল্যাপটপে পিডিএফ ভার্সনে বই পড়ার সুখ একদিকে, আর হাতে নিয়ে বই পড়ার সুখ আরেকদিকে। এ স্বাদের ভাগ হবে না।

দেবদাসে ঠেকল প্রেম

আবদুল্লা রহমান

‘বই কেন পড়তে ভালোবাসি’ -এই প্রশ্নের উত্তর তো আর এক বাক্যে দেওয়া যায় না। এরজন্য আমার বইয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে একটু কথা বলতে হয়। জীবনে প্রথমবার কবে বই পড়েছিলাম মনে নেই। তবে আবছা স্মৃতিতে ভাসছে ‘ও পাড়ার ময়না কেন কথা কয় না’ পড়ার সময় মায়ের হাতে কানমলা আজও মনে আছে। একটাই কথা, দোষ ছিল আওয়াজ করে পড়ছি না কেন! তারপর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে একবারে অনেক বই পেয়েছিলাম। সে কী আনন্দ! ছবি দেওয়া ছড়ার বই। তারপর প্রাইমারি থেকে হাইস্কুলে গণ্ডি পেরোনোর সময় পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি প্রচুর গল্প, উপন্যাস, কমিকস পড়েছি। খুব কম বয়সে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সুবাদে কার্ল মার্কস, ম্যাক্সিম গোর্কি, পাবলো নেরুদার লেখাপত্র পড়ার সুযোগ পেয়েছি। প্রথমবার নিজের টাকায় কোচবিহার মেলা থেকে কাজী নজরুল ইসলামের ‘সঞ্চিতা’ কবিতা সংকলনটি কিনেছিলাম। সালটা সম্ভবত ২০০৯। বই পড়ার নেশা এমন পেয়ে বসে যে একই বই বারবার পড়তে শুরু করি। ক্লাস নাইনে শরৎ সমগ্র প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম। দেবদাস আর শ্রীকান্ত আমার কৈশোরকে ভীষণ প্রভাবিত করেছিল। তাই হয়তো কলেজ পাশের আগে পর্যন্ত প্রেমে পড়া হয়নি। কলেজে ভর্তি হলাম। বিষয় বাংলা সাম্মানিক। বাংলা বইপত্র পড়ার লোভেই এই বিষয় নির্বাচন। পিএইচডি করছি। প্রচুর বই ঘাঁটতে হয়। হয়তো সেভাবে বই খুব কমই পড়া হয়।  যেমনটা পড়েছিলাম ২০১৪ সালে। সমরেশ বসুর দুটি বিতর্কিত উপন্যাস। ‘বিবর’ ও ‘প্রজাপতি’। সমরেশের ‘আদাব’ ছোটগল্প পড়ার সময় এই দুটি উপন্যাসের নাম ও বির্তকের বিষয়টি জানতে পারি। তারপর ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়, বনফুল, সুনীল, শক্তি, শরদিন্দু, দেবেশ, মল্লিকা প্রমুখের সাহিত্য ভাণ্ডারে ঢুঁ মেরে দেখার চেষ্টা করেছি।

বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে খুব কিছু বলার নেই। শুধু এটাই বলব, বই পড়ার নেশা চাই। শত ব্যস্ততার  মধ্যেও যদি একটু সময় করে বই পড়েন, তাহলে আপনার মন ও মস্তিষ্ক দুটোই ভালো থাকবে। আপনার চিন্তা ও কল্পনাশক্তিও বাড়বে। পড়া এমন একটি অভ্যাস যা সারাজীবন আপনাকে সাহায্য করবে। এটি একটি পুরস্কৃত সাধনা। তাই বলব, নিজে বই পড়ুন, কাছের মানুষজনকেও বই পড়ানোর চেষ্টা করুণ।

মন কেমনের সমাহার

মৃত্তিকা ভট্টাচার্য

বইয়ের আলমারির চাবিটা দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে অবিশ্যি কারও তেমন মাথাব্যথা ছিল না। বাড়ির আলমারি থেকে কে-ই বা ‘বই’ চুরি করবে? কিন্তু হঠাৎ চাবিটার দরকার পড়েছে। বেশ অনেক বছর আগে বইমেলা থেকে কমলা খামে মুড়ে নিয়ে আসা রাশিয়ার চিঠি যে দেশটার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল সেই দেশটাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ দরকার, কিন্তু করবে কে? ছোটবেলা থেকেই দুঃখবিলাসী মেয়েটা হ্যাপি এন্ডিং স্টোরি পড়তে পছন্দ করত না একেবারে। ফিকশন পড়লেও খুঁজত ‘কঠিন’ বাস্তব। একদিন সন্ধেয় আনা’র ডায়েরি পড়ে তার কান্না দেখে মা বলেছিল, ‘‘চল তোকে ‘চাঁদের পাহাড়’ কিনে দেব’’। তারপর সে ঘরে নিয়ে এল ‘আরণ্যক’ ও ‘পথের পাঁচালী’। একটু বড় হল, মন খারাপের রসদ জোগাল ‘বলিভিয়ান ডায়েরি’। চে’র চিন্তায় সারাদিন। চে-কে এইভাবে কেন মারল ওরা? ভেবে ভেবে ভুল করত ডেরিভেটিভে। ‘মন কোথায় থাকে তোমার?’ বকুনি আসত শিক্ষকের থেকে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভিকু’কে দেখে মনে হয়েছিল, ও যদি এতকিছু সত্ত্বেও বেঁচে থাকতে পারে, তবে সবাই পারবে। মনের জোর কয়েকগুণ বাড়লেও মন কেমন পিছু ছাড়ল কই? দুঃখ বয়ে বেড়ানোতেই স্বাচ্ছন্দ্য তার। মুখ ভার নিয়েও কাফকার চিঠিতেই ডুবে থাকত। মহাশ্বেতার গল্পের অন্ধকার দিনগুলোই হয়তো যাপন করত সে। মাথার মধ্যে সর্বক্ষণ কোনও না কোনও চরিত্র ঘোরাফেরা করছে। সে ‘নিজ’ হয়ে বাঁচছে খুবই অল্প সময়।

অতিমারি এসে ছবিটা আরেকটু বদলে দিল। ভাবার রোগ আরও বাড়ল। পরিস্থিতি একটু সচল হতেই ক’দিনের জন্য ঘুরতে এল পাহাড়ে। দার্জিলিংয়ে এক নামী ক্যাফেতে চায়ে চুমুক দিয়েই মনে পড়ল দিনকতক আগেই তো পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে চা বাগানের কর্পোরেটাইজেশন বিরোধিতায় কত গলা ফাটাল। এক সিনিয়ারের দেওয়া তিতির বইটার কথাও মনে পড়ল এক ঝলক। যেন শুনতে পেল চা শ্রমিকদের আর্তনাদ। বন্ধুর দেওয়া উপহার ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’র তেভাগার এক-একটা ছবি যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিল।

গতবছর বইমেলায় যাওয়া হয়নি তার। যেতে দেওয়া হয়নি। ডাক্তার বললেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়া, হ্যালুসিনেশন, সারাতে গেলে বন্ধ করতে হবে বই পড়া। তাই তো দরকার পড়েছিল সেই চাবিটার। খুঁজে না পাওয়ায় অগত্যা নতুন তালা লাগাতে হল আলমারিতে। এক বছর কেটে গিয়ে আবার একটা বইমেলার মরশুম। এবারেও হয়তো সেখানে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলবে না। কিন্তু বইয়ের সঙ্গে দূরত্বের মন খারাপ সারবে কীভাবে?

কত রুজিরুটি জড়িয়ে

সন্দীপ বসাক

নার্সারিতে সকালে স্কুল হত আমাদের। এরপর বাড়ি এসে স্নান করে খাওয়াদাওয়া সেরে মা ঘুমোতে বলত। আমিও ঘুমোতাম, কিন্তু গল্পের বই ছাড়া আমি কিছুতেই শুতে চাইতাম না। রামায়ণ, মহাভারত, গোয়েন্দা গল্প সহ আরও অনেক গল্পের বই ছিল আমার সেসময়ের সঙ্গী। গল্পের বই পড়ার নেশায় কোনও দিন দুপুরে ঘুমোতাম না। যার জন্য মায়ের কাছে বকুনি ও মার অনেক খেয়েছি। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয়েছি। পড়াশোনার চাপে গল্পের বই পড়া তখন অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে কলেজে আমি বাংলা বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ফলে আমাকে সাহিত্য, উপন্যাস, ছোটগল্প সহ আরও অনেক কিছুই পড়তে হত। যা ছিল আমার পছন্দের তালিকায়। এরপর কর্মজীবনে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে করতে এখন খবরের কাগজে  কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। যেখানে পড়াশোনা করাটা খুবই দরকার।

যদিও বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার শিখেছি। সেখানেও বিনোদনের মতো অনেক জিনিস রয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত বিনোদন যেন হাতের তালুতে সেখানে। তবুও বই পড়ার মতো নির্মল বিনোদন যেন অন্য কিছুতে পাই না আমি। ছোটবেলার বাবার মুখে একটা কথা খুব শুনতাম। তিনি বলতেন, ‘জ্ঞানের আজন্ম জ্ঞান সাধনা ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা বই পড়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়।’ সেসময় কথাটার মানে বুঝতে না পারলেও এখন খুব ভালো করে সেটা বুঝতে  পারি। বইয়ে ছাপায় লেখা পড়ে মনের যে শান্তি আসে তা ই-বুকে স্ক্রিনে পড়ে আসে না। বই পড়ার অভ্যাসই ধীরে ধীরে মানুষের মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসক্তির কারণে পড়ার প্রতি অনীহার জন্ম হয়। সেক্ষেত্রে স্মার্টফোনের বদলে সরাসরি বইয়ের পাতা উলটে পড়াটা অনেক ভালো।

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না আমাদের বই পড়ায় অনেকের রুটিরুজি জড়িয়ে। প্রথমে লেখক বই লেখেন। এরপর লেখাটি ছাপাখানায় ছাপা হয়। তারপর বইটাকে সুন্দরভাবে নকশা করা থেকে শুরু করে বাঁধাই এবং সবশেষে দোকানে বিক্রি। এতগুলি ধাপ পেরিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়। আর এই ধাপগুলি পেরোতে মানুষগুলোর অক্লান্ত পরিশ্রম তাঁদের রুটিরুজির ব্যবস্থা করে।

চরিত্রগুলি যেন আমরাই

তৃণা চৌধুরী

বইয়ের সঙ্গে আমার বেশ একটা অন্যরকমের সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকে আর পাঁচজন ছাত্রছাত্রীর মতোই স্কুলের বইয়ের সিলেবাস যখন ভয় ধরাত, তখনই মায়ের মতো ভালোবেসে আমায় কাছে টেনে নিয়েছিল গল্পের বই। মনে আছে, ছুটির দিনে দুপুরবেলা, বা সন্ধের হোমওয়ার্ক শেষে মা ‘ছোটদের রামায়ণ’ নিয়ে বসাতেন। নার্সারি স্কুলে পড়া আমার কাছে সেই ছিল প্রথম গল্পের বই। বেশিরভাগ সময়েই মা পড়তেন আমি শুনতাম। আবার কখনও নিজেই জোরে জোরে পড়ে উঠতাম পছন্দের সহজ কয়েক লাইন। তখন থেকে বই আমার কাছে ছুটির আনন্দের মতো।

ছুটি পড়লেই বাড়িতে হাজির হত রংবেরঙের বাংলা গল্পের বই। এখনও সেই অভ্যাস রয়ে গেছে। যে কোনও গল্পের বই হাতে তুলে নিলে মনে হয় যেন ছুটি পড়েছে। আগে শুধু গোয়েন্দা, রহস্য রোমাঞ্চ আমাকে বেশি টানত। তারপর কিছুটা বড় হয়ে বিভিন্ন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকেছি। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ থেকে সুচিত্রা ভট্টাচার্য, সমরেশ মজুমদারকে জানতে শিখেছি। আর মন খারাপ হলে শিবরাম। আমার মতে, খুব মন দিয়ে বই পড়তে পড়তে গল্পের দুনিয়ায় যেভাবে হারিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই বইয়ের প্রতি পাঠকের মূল আকর্ষণ। তখন নিজেকে গল্পের চরিত্রদের একজন বলে মনে হয়। এটাই বইয়ের বৈশিষ্ট্য। বই নিয়ে আমার এই পাগলামির সম্পর্ক আরও কিছুটা গুরুত্ব পেয়েছে পারিবারিক সূত্রে। ছোট থেকেই আমাদের বই বাঁধাইয়ের কারখানায় খুব কাছ থেকে বই তৈরি হতে দেখেছি।

সেইসঙ্গেই বইয়ে সাদা-কালো বা রঙিন অক্ষর ছাপার ম্যাজিক দেখেছি। খোলা কাগজের পৃষ্ঠা থেকে পুরো একটা বই তৈরি হতে এবং তার পিছনে অনেকজন মানুষের অনেকটা পরিশ্রম দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাই বোধহয় আর পাঁচজন পাঠকের থেকে আমার অনুভূতিটা একটু আলাদা। বড় হতে হতে বুঝেছি শুধু ভালোলাগার টান নয়, আমাদের বই পড়ার সঙ্গে বেশ কিছু মানুষের দৈনন্দিন রুজিরুটি জড়িয়ে আছে। প্রেসের কারিগর, মেশিনম্যান থেকে শুরু করে বাঁধাই কারখানার লোক কিংবা প্রকাশকের দোকানে থাকা কর্মচারীটিরও ভাত জোগাড় হয় আমাদের বই পড়া দিয়েই। তাই অন্য অনেক আকর্ষণীয় বিষয়ের থেকে বই আমার কাছে এখনও খুব বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের কারও কোনও বিশেষ দিনে আমি বই উপহার দিই। আবার নিজে বই উপহার পাওয়ার লোভও আমার সারাজীবনেও বোধহয় কমবে না।

 

বই কেন পড়ব না

ভার্চুয়াল জগতের বাধা  

সৌভিক সেন

এভরিথিং হ্যাজ আ রিজন, এই আপ্তবাক্যের সঙ্গে বোধহয় আমি পুরোপুরি একমত হতে পারব না। কেন বই পড়তে ভালো লাগে না, চট করে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলে পয়েন্ট ধরে ধরে বলাটা সত্যিই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এই যে আমার বর্তমান বাসস্থান থেকে কয়েক পা হাঁটা দূরত্বে বইমেলা চলছে, আমার সহকর্মীদের অনেকেই সেখানে গিয়েছেন, বই ঘেঁটে দেখেছেন, আমি একবারও সেই মাঠে পা রাখিনি। আসলে, ইচ্ছেটা হয়নি। কেন হয় না, জানা নেই। গল্প বা অন্য কোনও বিষয়ক বই শুধু নয়, স্কুল-কলেজের বই পড়তেও চূড়ান্ত অনীহা ছিল আমার মধ্যে। সেজন্যই হয়তো মধ্যমেধার পড়ুয়া হিসেবে থেকে গেলাম গোটা জীবন। স্কুলবেলায় একটা ছোটদের পত্রিকা কিনতাম। টুকটাক পড়তাম। ব্যাস, ওতেই ইতি। তারপর থেকে আজ অবধি কোনও পত্রিকায় হাত দিইনি।

এই না পড়ার অভ্যেসের কারণে কত কিছু অজানা থেকে গেল জানেন। উত্তরবঙ্গের ছেলে হয়ে এখানকার রাজনীতি, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, জনজাতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। ডুয়ার্সের বাসিন্দা হয়েও সেখানকার ইতিহাস অজানা। আলিপুরদুয়ারের ছেলে হয়েও টোটোদের জানতে পারিনি। জানার যে ইচ্ছে নেই, তা কিন্তু নয়। যখন কর্মক্ষেত্রে কোনও সিনিয়ারকে শুনি ওপরের বিষয়গুলো নিয়ে গড়গড় করে বলে যেতে, আমারও ইচ্ছে হয় অতটা গভীরভাবে আমার জায়গা, সেখানকার মানুষ, তাঁদের জীবনযাত্রাকে জানতে। একজনের কাছে তো এধরনের প্রচুর বই রয়েছে, বারবার তিনি বলেছেন সেগুলো নিয়ে পড়তে। একবার বোধহয় এনেছিলাম একটা, পুরোটা না পড়েই ক’দিন পর ফিরিয়েছি।

অনেকে বলে ছাপা বই না পড়লে পিডিএফ পড়ো। তাতেও অনীহা। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি ধৈর্যের অভাব? না, তা নয়। কাজ সেরে ঘরে গিয়ে একটা ওয়েব সিরিজ মধ্যরাতে শুরু করে পুরোটা শেষ না করে চোখ বুঝি না। তাই ‘ধৈর্য’ জিনিসটি ভরপুর আছে। সুতরাং, জানার ইচ্ছে থাকলেও, পড়ার নেই। আরও কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় রয়েছে। এই যেমন, সময়ের অভাব। জীবনটা একটা নির্দিষ্ট সাইকেলে চলছে আপাতত। ওঠো-খাও-স্নান করো-খাও-অফিস যাও-আবার খাও-ঘুমোও। মাঝে ফাঁক পেলে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে হারিয়ে যাও। এই ভার্চুয়াল জগতের নেশা মারাত্মক। ফেবু স্ক্রল থেকে ইনস্টার রিলের গোলকধাঁধায় ঢোকাটা সহজ, বেরোনো কঠিন। নেশায় মত্ত হয়ে বই পড়ার ইচ্ছেশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারছি না আর। এর চক্করে যে কতকিছু অজানা থেকে গেল, হিসেব কষতে বসলে শ্বাস ক্রমশ দীর্ঘ হয়।

পরীক্ষাই বইপ্রীতির কাঁটা

সুশোভন চক্রবর্তী

জ্ঞান অর্জনের জন্য তো অবশ্যই দরকার বই পড়া। সেখানে তো অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু সেই জ্ঞানার্জন যদি শুধু কিছু করে খাওয়ার লক্ষ্যে হয়, তাহলে আমার কাছে তা পরিতাপের বিষয়। শুধু বই পড়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে তো ঠিকই ছিল। কিন্তু বই পড়ে কী শিখলাম, তার প্রমাণ দিতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় নামা এক মহাবিড়ম্বনা কিংবা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে লজ্জার বিষয় আমার কাছে। সেজন্যই বইকে ভালোবাসা আজ পর্যন্ত হয়ে উঠল না আমার। পড়ার মতো পড়া যেন ঠিক হয়ে ওঠে না। বইয়ের পাতায় একটু মনোনিবেশ করতে চাইলেই কে যেন বলতে থাকে- ‘পরীক্ষায় বসতে হবে’।

বই পড়া এবং পরীক্ষা দেওয়া চিরকালই যেন সমার্থক আমার কাছে। সেই প্রাকপ্রাথমিক থেকেই তো লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক ইঁদুরের মধ্যে আমিও একটি। যত দিন গিয়েছে, ইঁদুরের সংখ্যা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বহুদিন আগে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির গণ্ডি পেরিয়ে এই মধ্য তিরিশে এসেও বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার সৌজন্যে আমি আজও সেই ‘ইঁদুর’। সেজন্যই জন্মেছে বইয়ে অনীহা। ‘জানার শেষ নেই’, ছোট থেকে শোনা এই আপ্তবাক্যটি শুধু মগজধোলাইয়ের জন্য বলেই মনে হয়েছে। এর বদলে বাক্যটি ‘পরীক্ষার শেষ নেই’ হতে পারত। বর্তমানে এই কেতাবি পড়াশোনার প্রতি আরও মোহভঙ্গ হয়, যখন দেখি চারপাশে তথাকথিত শিক্ষিত সমাজে নীতিশিক্ষার বড়ই অভাব। এত বই পড়ে আচার-ব্যবহারে অধোগামিতা কাম্য ছিল কি?

যার যতটুকু নীতিশিক্ষা রয়েছে, তা বই পড়ে হয়নি। নীতিশিক্ষা হয় শুনে এবং দেখে শেখার আগ্রহ থেকে, ছোট থেকে চরিত্র গঠনে, কিংবা ঘটনাবলির প্রভাবে। শোনা যায়, আদিকালে এই নীতিশিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হত। আজ থেকে শ-খানেক বছর আগেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রতিযোগিতার মানসিকতা কতটা ছিল, তা গবেষণার বিষয়। ইতিহাসে নামকরা এমন অনেকেই তো ছিলেন, যাঁরা স্কুলে পড়েননি। কিংবা পড়লেও বেশিদূর এগোননি। এখানে অনেকেই বলবেন, তাঁরা বাড়িতে বই পড়েছিলেন। কিন্তু, কিছু করে খাওয়ার লক্ষ্যে স্কুল-কলেজে অন্যকে ল্যাং মারার প্রতিযোগিতা, তথা পরীক্ষায় বসলে তাঁদের নাম আদৌ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকত কি না, এনিয়ে সন্দেহ আছে। আমার প্রশ্ন, এই পরীক্ষা নামক বিষয়টি কি বিলুপ্ত করে দেওয়া যায় না?

একই অনুভূতি পিডিএফেও

সৃজনী ঘোষ

বই পড়তে ভালোবাসি না, যখনই বলেছি, সমাজ আমাকে একঘরে করে দিয়েছে। কয়েকজন তো আবার বোঝাতেও বসে গিয়েছে, কেন বই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু মি বিইং দ্য ইন্ট্রোভার্ট, রক্তমাংসের মানুষ এবং কাগজ-কালির বই, দুই সমানভাবে এড়িয়ে চলি। এমনটা নয় যে পড়তে ভালোবাসি না, বাবা কোনও কিছু দোকান থেকে কাগজের ঠোঙায় নিয়ে এলে খালি ঠোঙার লেখা পড়া চাই-ই চাই। কিন্তু  বই হাতে নিয়ে সবসময় বসে থাকাটা একটু চাপের।

বই না পড়েও তো ‘পড়া’ যায়। পছন্দের লেখক কিংবা কবির লেখা পড়তে চাইলে বই ‘ওয়ানস্টপ ডেস্টিনেশন’ নয়। অডিও স্টোরির প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, পড়ার জন্য অ্যাপ রয়েছে। একটা বই কেনার টাকা দিয়ে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে নিলেই হল। যে কোনও সময়, যেখানে ইচ্ছে বসে পছন্দের গল্পের পছন্দের পার্ট পড়ে নিলাম। বা শুনে নিলাম। বই না পড়েও অনেক কিছু জেনে ফেললাম।

বইপ্রেমীরা বলবে, বইয়ে গল্প, কবিতা পড়ার মতো অনুভূতি নাকি পিডিএফ কিংবা অডিও স্টোরি দিতে পারে না। কিন্তু আমার মনে হয়, সেই একই অনুভূতি পিডিএফ কিংবা অডিও স্টোরিতেও পাওয়া যায়। লেখক কিংবা কবির সৃষ্টিকে সার্থকতা কাগজের বই দেয় না, দেয় পাঠকের তৃপ্তি। অনেকের মতে, দ্বিতীয়বার সেই গল্প বা কবিতা বইয়ে পড়ার সময় সেই পাতায় এসে পুরোনো কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই একই অনুভূতি পিডিএফ কিংবা অডিও স্টোরি দিতে পারে। বইও তো যে কোনও সময় পড়া যায়। কোনও এক অলস দুপুরে বসে পছন্দের ভূতের গল্পের সেই হাড়হিম করা জায়গাটা আবার পড়ার ‘ক্রেভিংস’ হল। বাড়িতে থাকায় বই খুঁজে সেই পার্টটুকু পড়ার পর শান্তি! কিন্তু এই ‘ক্রেভিংস’ টাই যদি কোথাও বেড়াতে গিয়ে হয়। কত বই নিয়ে যাবে বইপ্রেমী? সুটকেসে

তারা না হয় কোনও জামাকাপড়ই নিয়ে গেল না, শুধু বই-ই নিয়ে গেল। সেটাও কতগুলো দশটা, পনেরোটা। কিন্তু আমার যদি তখন মনে পড়ে ব্যোমকেশের ‘চোরাবালি’র সেই দৃশ্যটার কথা, যেখানে অজিত চোরাবালি রয়েছে না জেনেই পা বাড়াতে যায়, এবং ব্যোমকেশ তাকে আটকায়। অথবা স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘পাল্টা হাওয়া’র শেষ দৃশ্য যেখানে রাস্তার এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে রীপ এবং মৌনিকা। অডিও স্টোরি কিংবা মোবাইলে গল্পের অ্যাপ আমাকে সেই স্বাধীনতা দেয়।

 

পাঠক-লেখক দ্বন্দ্ব

তমোঘ্ন ব্রহ্ম

রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেটা’ কবিতার সেই দামাল বালককে মনে আছে? যার অজস্র ‘দুষ্টুমির’ মধ্যে অন্যতম, কবির লেখা শিশুপাঠ্যের কবিতা না পড়ে পাতাগুলো কেটে দিয়ে ইঁদুরের নামে দোষ দেওয়া। পণ্ডিতেরা যতই এই কবিতাকে রাধাকমল মুখোপাধ্যায়ের ‘লোকশিক্ষা ও জননায়ক’ প্রবন্ধের প্রত্যুত্তরে কবিগুরুর লেখা ‘বাস্তব’ প্রবন্ধের পরবর্তী অংশ মনে করুন যেখানে কবি তাঁর লেখার বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনা খানিক মেনে নিচ্ছেন বলে ধারণা, আমার বরাবরই অন্য জিনিস মনে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথও তো একসময় সেই দামাল বালকই ছিলেন, যিনি হয়তো একই দস্যিপনাগুলো করতেন, যারও হয়তো তখন তার সামনে থাকা বই পড়তে মোটেও ভালো লাগত না। আর কে বলতে পারে রবীন্দ্রনাথের লেখক হয়ে ওঠা নিজের মধ্যে থাকা সেই ছেলেটার চাহিদা মেটানোরই জন্য। কিন্তু জীবনের সায়াহ্নে এসে এই কবিতা লেখার সময় তাঁর মনে হচ্ছে বালক বা পাঠক রবীন্দ্রনাথের চাহিদা লেখক রবীন্দ্রনাথ মেটাতে পারেননি, যার প্রতিফলন ঘটছে একদম কবিতার শেষে।

এখনকার প্রজন্মের ধৈর্য কম, কারণ অবশ্যই জীবনে রিলস এবং শর্টসের বাড়বাড়ন্ত একথা মেনে নিতে আপত্তি কেউ করবেন না। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে কী মজুত রয়েছে সেদিকেও তো তাকানো প্রয়োজন। একগুচ্ছ বিদেশি লেখককে অনুকরণ, নাহলে আগে থেকে ছকে নেওয়া পরবর্তী পদক্ষেপ (পড়ুন সিনেমা বা বিশেষ অডিও উপস্থাপনা) আর নাহলে লেখক জীবনের শুরুতে যে জিনিস পাঠক ভালোবেসেছিলেন সেই একই জিনিস ফর্মুলার আকারে বারবার গেলানো। এ তো গেল সিংহভাগের কথা আর যা বাকি থাকে, যার জন্য হয়তো পাঠক আগ্রহী, প্রকাশকরা সেগুলোর দাম এমন আকাশছোঁয়া করে দিলেন যা আক্ষরিক অর্থেই হয়ে গেল ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর সঙ্গে বেশিরভাগ লেখকের পলিটিকালি কারেক্ট থাকতে চাওয়ার প্রবণতা, সহজে বিখ্যাত হতে চাওয়ার চেষ্টা, এই সবকিছু আমার মতো পাঠকদের বইয়ের থেকে কেবল বিমুখ আর বিমুখই করে গেল। কী পড়তে চাই সেটা কি নিজেও ঠিক করতে পেরেছি? দু’একবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর বই দেখলেই পালিয়ে গিয়েছি, কখনও আর খোঁজার আর বোঝারও চেষ্টা করিনি যে আমার পাঠকসত্তা লেখকের কাছে কী চায়। অর্থাৎ দোষ আমারও। তাহলে অতঃকিম? চলুন লেখক আমি আর আপনি কোলাকুলি করি, যেখানে আপনি কবিগুরুর ‘ছেলেটা’ কবিতার শেষ অংশ থেকে অনুপ্রাণিত হোন আর বলুন ‘সে ত্রুটি আমারই’ আর আমি না হয় আধুনিক বাংলা গানকে ধার করে বলি ‘আমার ভুল হয়ে গেছে প্রিয়, আমায় ক্ষমা করে দিও’।

বইপ্রেমী হয়েও বইপোকা নয়

গোপীকৃষ্ণ সামন্ত

কোনওদিনই সেই অর্থে বইপোকা ছিলাম না। তবে বই পড়তে খারাপ লাগে না। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ার সুবাদে ছোট থেকেই বেশকিছু বাধ্যবাধকতার মধ্যে বড় হতে হয়েছে। তাই স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া পর্যন্ত বইমেলা দেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ‘খরা’ প্রথম কেটেছিল কলেজে পড়ার সময়। বন্ধুদের সঙ্গে সেই প্রথমবারের মতো কাছ থেকে বইমেলা দেখা। তবে নেহাতই ছোট সেই বইমেলায় হাতেগোনা কয়েকটি দোকান বসেছিল। পকেটে টান থাকায় খুব বেশি বই কেনা হয়ে ওঠেনি সেদিন। তবে যতদূর মনে পড়ে, একটা গল্পের আর একটা কুইজের বই কিনেছিলাম সেদিন। মলাট ছেঁড়া বই দুটো আজও বেশ যত্ন করেই রাখা রয়েছে। কেন বই পড়তে ভালো লাগলেও বইপোকা হওয়া হয়ে ওঠেনি আমার? অবশ্যই হাতের কাছে সবসময় সব বই না পাওয়া। দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই সব সময় পছন্দের বই কেনার টাকা না থাকা।

সময় বদলেছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি। বিষয়টা খুব একটা জানা ছিল না প্রথম দিকে। কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় বাবা একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিলেন। অনার্স নিয়ে পড়ার সুবাদে অনেক বই পড়ার দরকার পড়ত। বন্ধুরা বলেছিল, হোয়াটসঅ্যাপ থাকলে তারা নোটসপত্র পাঠিয়ে দেবে। সঙ্গে প্রয়োজনমতো কোনও পিডিএফও। সেই শুরু অনলাইন পড়াশোনার। ধীরে ধীরে কখন যে প্রয়োজনে পিডিএফ পড়াটা, পাতা উলটে বই পড়াটা থেকে দূরে সরিয়ে দিল টের পাইনি।

এরপর পড়াশোনার সূত্রে পা রেখেছিলাম কলকাতাতে। হ্যাঁ বইপাড়াতে ইউনিভার্সিটি হওয়ায়, এশিয়ার বৃহত্তম বইয়ের মার্কেটের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু ততদিনে তো প্রয়োজনের বাইরে বই পড়ার অভ্যাসটাই বদলে গিয়েছে। পুরোনো বইয়ের দোকানের পাশে বন্ধুদের সঙ্গে চা খেতে গিয়ে ধীরে ধীরে মনের ভিতরে সুপ্ত অবস্থায় থাকা সেই ইচ্ছেটা উঁকি দিয়েছিল বেশ কয়েকবার। তারপর ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটা বই ভাণ্ডারে মজুতও করে নিয়েছিলাম। তবে, ওই যে বইপোকা না হওয়ায় সব বই পড়া হয়ে ওঠেনি।

সময়ের সঙ্গে গতানুগতিক পড়াশোনার পালা শেষ হয়েছে বছর দুয়েক হল। শুরু হয়েছে কর্মজীবন। চাইলেই বই কেনা যায় আজকাল। কিন্তু ওই যে কলেজ জীবন থেকে পিডিএফ পড়ার সুযোগ, পাতা উলটে বই পড়ার ইচ্ছেটাকেই বদলে দিয়েছে। তাই ইচ্ছে হলেও বই কেনা হয় না। প্রয়োজনে পিডিএফ তো রয়েইছে।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Recipe | রাঁধুন ঝরঝরে ভুনা খিচুড়ি, দেখুন রেসিপি

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বৃষ্টি পড়লেই যে খিচুড়ি খেতে হবে তার কি কোনও মানে আছে? ইচ্ছে হলেই বানিয়ে নিতে পারেন খিচুড়ি। তবে খিচুড়ি খেতে...

Bjp | দিল্লি দখলে ‘রেউড়ি রাজনীতি’-ই ভরসা বিজেপির, মহিলাদের মাসে ২৫০০, প্রবীণদের বিমার প্রতিশ্রুতি

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মহিলাদের ভোটকে ভরসা করেই দিল্লি দখলের স্বপ্ন দেখছে পদ্ম শিবির। দলের ইস্তেহার প্রকাশ করে এদিন মহিলাদের জন্য নানা প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি...

Kaliachak murder case | গোপন ডেরা থেকে গ্রেপ্তার কালিয়াচক কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত জাকির, বাকিদের...

0
কালিয়াচক: যদুপুরে তৃণমূল কর্মী হত্যা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জাকির শেখকে অবশেষে গ্রেপ্তার করল কালিয়াচক থানার পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে একটি গোপন ডেরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার...

India-Bangladesh Border | সীমান্তের কাঁটাতারে কাঁচের বোতল ঝোলাচ্ছে বিএসএফ, কারণ টা কী?  

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলছে কাচের বোতল। শুক্রবার সকালে এমনই দৃশ্য দেখা গেল কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের তিন বিঘা এলাকায়। শোনা গেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত...

Harishchandrapur | পুরোনো হামলার প্রতিশোধ! মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ কে খুঁটিতে বেঁধে পেটালেন জনতা  

0
হরিশ্চন্দ্রপুর: বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে এক মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধকে মারধরের ঘটনা ঘটল হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায়। মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে গিয়ে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বৃদ্ধকে...

Most Popular