সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

সংকট ও কর্তব্য

শেষ আপডেট:

জঙ্গি হামলায় পহলগামে ২৬ পর্যটক এবং এক টাট্টুওয়ালার মৃত্যু কাশ্মীর তথা ভারতের ইতিহাসে আরও একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পহলগামকে ভারতের ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ বলার যুক্তিসংগত কারণ আছে। নিহতদের মধ্যে সদ্যবিবাহিত এক তরুণ ছিলেন, যিনি ভিসা না পাওয়ায় ইউরোপে না গিয়ে মধুচন্দ্রিমা করতে পহলগামে গিয়েছিলেন। সেখানেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে তাঁর।

নিহতের তালিকায় রয়েছেন আমাদের রাজ্যের তিনজন।‌ কলমা পড়তে পারছে কি না, সেই পরীক্ষা নিয়ে বেছে বেছে পুরুষদের গুলি করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা।‌ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ভারতে থাকাকালীন ঘটল এই হামলা।‌ দিনদুপুরে সেনা পোশাকে পাঁচ-ছ’টা লোক হত্যালীলা চালিয়ে বৈসরণের সবুজ গালিচাকে রক্তাক্ত করে দিয়ে গেল। তারা পাহাড়, জঙ্গল পেরিয়ে হেঁটে হেঁটে এল, আবার অপারেশন সেরে নির্বিকার ফিরে গেল।

এখন নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি বলে বিবৃতি দিলেও সন্দেহের তির কিন্তু পাকিস্তানের দিকেই। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিরক্ষা খাতে ফি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, এত জওয়ান-কমান্ডো নিয়োগ হয়, তাহলে প্রয়োজনের সময়ে কেন তার ফল মেলে না? কেনই বা ঘটনার মুহূর্তে একজন জওয়ানকেও সেখানে দেখা যায়নি? দু-এক মিনিটে পুরো গণহত্যাপর্ব সাঙ্গ হয়েছে- এমন তো নয়।

অথচ এখন কড়াকড়ির দরুন পহলগাম সহ গোটা কাশ্মীরে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ টপকে মাছি গলার উপায় নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা পহলগাম ঘুরে এসেছেন। বিহারের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পহলগাম কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছেন। দিল্লি, মুম্বই সহ ভারতের বেশ কিছু শহরে এখন চূড়ান্ত সতর্কতা। দেশজুড়ে নজরদারি।‌

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের কলেজ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে কাশ্মীরি শ্রমিকদের। অন্যদিকে, সীমান্তে তৎপরতা বাড়ছে সেনার। ভারত-পাকিস্তানের প্রায় সবরকম সম্পর্ক আপাতত ছিন্ন। এমাসেই ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে পাকিস্তানিদের। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে। ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তান সিমলা সহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার হুমকি দিয়েছে।‌

রাস্তাঘাটে সর্বত্র আলোচনা এখন একটিই- যুদ্ধ কী লাগছে! যেন যুদ্ধ লাগাতে পারলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।‌ এর আগেও যতবার জম্মু-কাশ্মীরে বড়সড়ো জঙ্গিহানা হয়েছে, ততবার যুদ্ধের জিগির তোলা হয়েছে। ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের প্রাক্কালে অনন্তনাগে জঙ্গিহানায় ৩৬ শিখের মৃত্যু, ২০১৬-য় পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে জঙ্গিহানা ও ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে ভয়াবহ হামলার সময়েও পালটা আক্রমণের দাবি উঠেছিল।

পাকিস্তান থেকে জঙ্গিরা এসে হামলা চালালেই বদলার প্রসঙ্গ ওঠে। এটাও ঘটনা যে, একবার প্রত্যাঘাত করতে পাকিস্তানে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। এবার হামলায় জড়িত ৯ জঙ্গির বাড়ি ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দিয়েছেন জওয়ানরা। আসলে কার্গিল যুদ্ধ হোক বা ২৬/১১-র মুম্বই হানা, পাকিস্তান নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বারবার। সুতরাং পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া অবশ্যই জরুরি।

এ রকম পরিস্থিতিতে বিরোধীরা সরকারের পাশে থাকে। মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তে আরেক প্রতিবেশী বাংলাদেশও তীব্র ভারতবিরোধী। একদিকে ঢাকার বিরোধিতা, অন্যদিকে ইসলামাবাদের উপদ্রব। সারাক্ষণ যদি দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে সামলাতে হয়, তাহলে ভারতের নিজস্ব উন্নয়ন, বিজ্ঞান গবেষণা, মহাকাশ অভিযান কখন হবে? এই উপমহাদেশে বড় দেশ হিসেবে ভারতের দায়দায়িত্ব বেশি।

পহলগামের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসংঘ দুই দেশকেই সংযম দেখাতে বলেছে। দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছে ইরান। তাই পাকিস্তানকে চাপে রাখার পাশাপাশি ভারতকে কূটনৈতিক বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা দেখাতে হবে। দেশের সংকটের মুহূর্তে এটা মাথায় রাখতে হবে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শা-দের।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

দলবদলের শিক্ষা

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের আর মাত্র এক বছর বাকি। তার...

ঢাকার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ

পাকিস্তানকে নিয়ে ভারতের বিড়ম্বনা সেই ১৯৪৭ থেকেই। কিন্তু ২০২৪-এর...

বক্রদৃষ্টি

পাকিস্তানি মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর প্রত্যাঘাতের সাফল্যে দেশবাসীর...

চৌদিকে ভীতির বাণ

বড় ভয় চারদিকে। বলতে ভয়, লিখতে ভয়। নিজের মতপ্রকাশেও...