পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: পেটের টানে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে গায়েব হচ্ছেন বালুরঘাটের একাধিক শ্রমিক। দক্ষিণ দিনাজপুরের (Dakshin Dinajpur News) বালুরঘাট (Balurghat) শহরের পাশেই ভুসিলা গ্রাম থেকে প্রায় সাতজন শ্রমিকের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলায়। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনা অজানা নয় পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদেরও। কর্মসংস্থানের অভাব ও মানবপাচারের আশঙ্কা তুলে ধরছে বাম ও বিজেপি। তৃণমূলের তরফে বাইরে কাজ করতে গেলে পঞ্চায়েতে নাম নথিভুক্ত করার কথা জানানো হচ্ছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরে বড় মাপের কোনও শিল্প নেই। কয়েকটি চালকল ছাড়া তেমন কারখানা গড়ে ওঠেনি এই জেলায়। তাই পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন প্রচুর শ্রমিক। মূলত দালালদের হাত ধরে তাঁরা বাইরের রাজ্যে কাজ করতে চলে যান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের লোকও জানতে পারছেন না তাঁরা কোথায় কাজ করতে গিয়েছেন। গ্রামেগঞ্জে এখনও দাদন প্রথায় পরিবারের হাতে হাজারখানেক টাকা তুলে দিয়ে বাড়ির পুরুষ চলে যাচ্ছে অন্য রাজ্যে। একপ্রকার সকলের অজান্তেই শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে গিয়ে একের পর এক উধাও হয়ে যাচ্ছেন।
ভাটপাড়া গ্রামের উপপ্রধান তথা ভুসিলা সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য শিবু সরকার বলেন, ‘এই এলাকায় প্রায় ২০ শতাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস। তাঁরাই মূলত বাইরের রাজ্যে কাজে যাচ্ছেন। ৬ থেকে ৭ জন এই এলাকার শ্রমিক নিখোঁজ। আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। চিঠিও করেছি। তবু তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। দাদন প্রথায় দুঃস্থদের বাড়িতে টাকা দিয়ে শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। পেটের দায়ে তাঁরা যাচ্ছেন।’
শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনা ক্রমশ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী জানান, ‘জেলায় কর্মসংস্থান না থাকায় গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবার থেকে কেউ বাইরে কাজ করতে যাচ্ছে। যেসব দালাল শ্রমিকদের নিয়ে যাচ্ছে, তারা কিছু লিখিত প্রশাসন বা থানায় দিচ্ছে কি না দেখা উচিত। রাজ্যে খেলা, মেলা করতে গিয়ে আর্থিক পরিস্থিতি শেষ। এর সুযোগ নিচ্ছে দালাল। অনেক পরিবার সর্বসান্ত হচ্ছে। জেলা শাসক ও থানায় আমরা ডেপুটেশন দেব।’
অন্যদিকে, বামফ্রন্টের তরফে শ্রমিকদের বাইরের রাজ্যে নিয়ে গিয়ে মানবপাচারের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি সুভাষ চাকির বক্তব্য, ‘বাইরের রাজ্যে কাজ করতে গেলে নির্দিষ্ট পঞ্চায়েতে নাম লিপিবদ্ধ করলে তার তথ্য থাকে। শ্রমিকদের এটা নৈতিক দায়িত্ব। পরিযায়ী শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনাটি সামনে এসেছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের বর্তমান অবস্থার খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করব।’