বিশ্বজিৎ প্রামাণিক, কুমারগঞ্জ: এর আগে দু’বার শিলান্যাস হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের (Dakshin Dinajpur) কুমারগঞ্জের (Kumarganj) একটি রাস্তার। তবে এখনও সেই রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। তবে অবাক করা বিষয় হল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ ফের একবার ওই অসম্পূর্ণ রাস্তার শিলান্যাস করতে চলেছেন। ২ জুলাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকে আসছেন উদয়ন। তাঁর সফর ঘিরে জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। সেসময় তিনি কুমারগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত প্রায় বারোটি রাস্তার মধ্যে কয়েকটির শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করবেন বলে জানা গিয়েছে। একই মঞ্চ থেকে ভার্চুয়ালি তিনি একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন।
তবে গোটা সফরের কেন্দ্রে এখন কুমারগঞ্জের দিওর থেকে ঝাড়া প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তা। ফলে একই রাস্তার তৃতীয়বার শিলান্যাসের আয়োজন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা নেতা মানস সরকারের কথায়, ‘মেলা আর খেলা দিয়ে ভাঁওতাবাজি চলছে। নয়তো একই রাস্তার তিনটি অনুষ্ঠান হয়? এখনও অর্ধেক কাজ বাকি!’ যদিও তৃণমূল বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘মন্ত্রী শুধু ওই একটি রাস্তার অনুষ্ঠান করতে আসছেন না। গোটা বিধানসভার দশ-বারোটি রাস্তার শিলান্যাস-উদ্বোধন করবেন। আমি আরও কিছু নতুন প্রস্তাব তাঁকে দেব। সরকার প্রচুর কাজ করছে।’
প্রায় ছয় বছর আগ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের আওতায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে শুরু হয়েছিল ওই পাকা রাস্তা তৈরির কাজ। সেসময় প্রথম শিলান্যাস অনুষ্ঠান হয়েছিল ঘটা করে। এরপর মাঝপথে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে চলে যান। রাস্তার পাথর ছড়ানো এবড়োখেবড়ো পথে চলাচলে গত ছয় বছরে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল বাসিন্দাদের। এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি ‘দিদিকে বলো’-তেও বারবার সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
শেষমেশ চলতি বছরের শুরুতে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে আবার শুরু হয় কাজ। তখন ফের একবার শিলান্যাস অনুষ্ঠান হয়। বর্তমানে ওই রাস্তায় দিওর বাজার থেকে সরঞ্জাবাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হলেও বাকি তিন কিলোমিটার অর্থাৎ গোয়ালকুড়ি থেকে মাস্টারপাড়া হয়ে ঝাড়া স্কুল পর্যন্ত এখনও অসম্পূর্ণ। ঠিক এই অবস্থাতেই মন্ত্রীর সফরের দিন ফের একবার শিলান্যাস অনুষ্ঠান ঘিরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এতেই জোর চর্চা চলছে।
সিপিএমের জেলা নেতা মোফাজ্জল হোসেনও তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। আর তারও সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ব্লক কুমারগঞ্জ। এখানকার মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষ এর জবাব দেবে।’
এখন দেখার বিষয়, তৃতীয়বারের শিলান্যাস বিতর্কের আবহে প্রশাসনিক এই সফর উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনে, নাকি রাজনৈতিক তর্জায় তীব্র হয় প্রশ্নের ঝড়।