সৌরভ রায়, ফাঁসিদেওয়া : আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণাচক্রের মূল অভিযুক্ত মহম্মদ সইদুলের হাত অনেকটাই বিস্তৃত বলে তদন্তকারীদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। সইদুলের দুবাই যাত্রার অন্যতম সঙ্গী তথা প্রতারণা কারাবারে তার সহকর্মী মহম্মদ শেখের চটহাটের তুফানডাঙ্গির বাড়িতে ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ রবিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু এটিএম কার্ড ও সিম উদ্ধার করে। এই সূত্রে সাইবার প্রতারণার অনেকটাই স্পষ্ট হবে বলে তাদের ধারণা। তবে তারা এবিষয়ে এখন বেশি কিছু বলতে চাইছে না। ফাঁসিদেওয়া থানার ওসি চিরঞ্জিত ঘোষ বলেন, ‘এই প্রতারণা কারবারের পিছনে থাকা প্রত্যেকেই খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত বেশি কিছু জানানো সম্ভব নয়।’
জামতাড়ার কায়দায় অন্যের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে দুবাই সহ বাইরের দেশে টাকা পাঠানোর কারবারে জড়িত চটহাট হাগরাগছের বাসিন্দা মহম্মদ সইদুল গত ৪ মার্চ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকেই অভিযুক্ত মহম্মদ শেখ পলাতক বলে পুলিশের দাবি। সইদুলকে নিজেদের হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরই পুলিশ জানতে পারে সইদুলের সঙ্গে মহম্মদ শেখের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাকে ধরতে পারলেই বহু অজানা তথ্য মিলবে বলে পুলিশ মনে করছে। তাই এদিন বিকেলে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। মহম্মদ শেখকে অবশ্য সেখানে পাওয়া যায়নি। মা, বোন ও এক সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন। সাতদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই বলে মহম্মদ শেখের স্ত্রী জানিয়েছেন। পড়শিরা জানালেন, গ্রেপ্তারির ভয়ে মহম্মদ শেখ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সে একবারও গ্রামমুখী হয়নি।
পুলিশ সূত্রে খবর, সইদুলের সঙ্গী হয়ে মহম্মদ শেখ অন্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে তা দিয়ে টাকা লেনদেনের কারবার চালানোর পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সইদুলের সব ধরনের অপরাধমূলক কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সইদুল মাঝেমধ্যেই দুবাই যেত। সেই সময় মহম্মদ শেখ তার সঙ্গী হত। এদিন তার বাড়ি থেকে যে সমস্ত এটিএম কার্ড উদ্ধার হয় সেগুলি ব্যবহার করে কত টাকার লেনদেন করা হয়েছে তা তদন্তকারীরা বোঝার চেষ্টা করছেন। এগুলি ব্যবহার করে শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় মতো দেশগুলিতে টাকা পাচার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও, পুলিশকে সইদুলের জানানো তথ্য অনুযায়ী, মহম্মদ শেখ তার কাছে থাকা বেশিরভাগ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসবই পুড়িয়ে ফেলেছে। আরও বেশকিছু কাগজপত্র এবং ব্যাংকের নথি বাড়ির অদূরে থাকা মহানন্দা ক্যানালে ভাসিয়ে দিয়েছে। পুলিশ মনে করছে, জিজ্ঞাসাবাদে সইদুল কিছু তথ্য গোপন করলেও মহম্মদ শেখকে ধরা গেলেও এই চক্রের বিষয়ে আরও অনেককিছুই জানা যাবে। দুটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের বিরুদ্ধে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে সইদুলদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই দুই ব্যাংকের ম্যানেজারদের তলব করেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই ব্যাংকের ম্যানেজারদের তরফে কোনও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের দাবি। ফাঁসিদেওয়া থানার ওসির পাশাপাশি ঘোষপুকুরের ওসি সঞ্জয় তিরকি এবং তদন্তকারী অফিসার এদিনের অভিযানে শামিল ছিলেন।