মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি: শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতির পাড়াতেই ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের খোঁজ মিলল। খবর চাউর হতেই টর্চ হাতে সমীক্ষায় নামলেন গ্রামীণ সম্পদকর্মী ও পতঙ্গবিদরা। যদিও দেখা মিলল না আশাকর্মীদের।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে নকশালবাড়ি (Naxalbari) গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবুপাড়া সংসদে এক ডেঙ্গি আক্রান্ত মহিলার খবর গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঠিয়ে ওই এলাকায় দ্রুত যাবতীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইমতো পতঙ্গবিদদের একটি টিম সহ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও গ্রামীণ সম্পদকর্মীরা সকাল থেকেই ডেঙ্গি আক্রান্ত বাবুপাড়ায় বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালান। তখনই অধিকাংশ বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে, ভাঙা বালতিতে, নালানর্দমা, অব্যবহৃত সমাগ্রীতে ডেঙ্গির এডিস মশার লার্ভা মেলে। কিছু বাড়িতে ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস মশার লার্ভাও পান স্বাস্থ্যকর্মীরা। পতঙ্গবিদদের আশঙ্কা, দ্রুত এই লার্ভা মশায় পরিণত হলে ডেঙ্গির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণকারী দলকে ওই এলাকায় ধারাবাহিক সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবুপাড়ার বিমলাদেবী সাহানি চিকিৎসাজনিত কারণে ক’দিন আগে সপরিবার হায়দরাবাদে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরতেই স্বামী সহ বিমলাদেবী জ্বরে পড়েন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি মেলে। বর্তমানে তাঁরা বাড়িতেই চিকিৎসাধীন। এদিন এলাকাবাসীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য আশাকর্মীদের থাকার কথা থাকলেও তাঁদের দেখা যায়নি। এনিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ জানান। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর এলাকার নালানর্দমা সাফাই হয় না। বাবুপাড়া মশার স্বর্গরাজ্য হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জলি ঘোষের কথায়, ‘গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নালানর্দমা সাফাই হয় না। শুধুমাত্র বাড়ি বাড়ি স্প্রে করছে। ঝোপজঙ্গলও সাফাই হচ্ছে না।’ একই অভিযোগ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী নেপাল ঘোষের। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্যা। এলাকার নালা সাফাইয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে বহুবার অভিযোগ জানালেও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে, মশার উপদ্রব বাড়ছে। এনিয়ে আমার স্ত্রী সভাধিপতির কাছেও অভিযোগ জানান। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এখন ডেঙ্গি ধরা পড়তেই সবাই নড়েচড়ে বসেছে।’
ব্লকের এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, সংক্রমণের প্রথম পর্যায়েই মোকাবিলা জরুরি। তবে এজন্য প্রশাসনের কাছে নির্ভুল তথ্য থাকা দরকার। এমন তথ্য পেতে আশাকর্মী, ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল (ভিবিডিসি) কর্মী, গ্রামীণ সম্পদকর্মীরা বিশেষভাবে সাহায্য করেন। তাঁরা জ্বরের খবর সংগ্রহের পাশাপাশি ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচারও চালান। তাই বর্ষার আগে আগে ভিবিডিসি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য মোবাইল অ্যাপসের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। কোথাও জ্বরের খবর পেলেই তা স্বাস্থ্য ভবনে দ্রুত পরিবারের ফোটো দিয়ে আপলোড করে জানাতে হবে।
নকশালবাড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কুন্তল ঘোষের কথায়, ‘আমাদের ব্লকে গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে। তবে আসন্ন বর্ষায় চিন্তা রয়েছে। সভাধিপতির এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। আমরা ডেঙ্গির চিকিৎসা বিষয়ে দেখি। ডেঙ্গি মোকাবিলা করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। এজন্য গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগে রাখছি।’ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেন, ‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় ভিবিডিসি কর্মীরা প্রতি বছরই ভালো কাজ করেন। এবছর কেন ডেঙ্গি আক্রান্ত হল তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’