Friday, March 29, 2024
HomeBreaking Newsবায়রন ইস্যুতে তর্কযুদ্ধ ডেরেক-রমেশের, ভারসাম্য রক্ষায় মমতা

বায়রন ইস্যুতে তর্কযুদ্ধ ডেরেক-রমেশের, ভারসাম্য রক্ষায় মমতা

নয়াদিল্লি: ব্যক্তিগত জীবনে দুজনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সংসদে দুটি পৃথক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও, তাঁদের ‘বন্ধুত্ব’ অটুট ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু সাগরদিঘি বিধায়ক বায়রন বিশ্বাসের অপ্রত্যাশিত ‘দলবদলু’ অবতার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বাদানুবাদে জড়িয়ে তাঁদের সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কেও কার্যত প্রশ্ন তুলে দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা-সাংসদ জয়রাম রমেশ। এইদিন বায়রন ইস্যুতে দুজনেই কার্যত জড়িয়ে পড়েন উত্তপ্ত বাদানুবাদে।

পাটনার বিরোধী দলের বৈঠকের এখনও বাকি দু সপ্তাহ। তার আগেই বায়রন ইস্যুতে আড়াআড়ি বিভাজন কংগ্রেস-তৃণমূলে। ‘সাগরদিঘি মডেল’ নস্যাৎ করে কংগ্রেস বিধায়ক বায়রন বিশ্বাসের উপনির্বাচনে জেতার তিনমাসের মধ্যে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ‘শরণাপন্ন’ হওয়ায় গোটা রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচির ক্যাম্পে কংগ্রেস ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরেই নাম লেখালেন সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক। বায়রনের এহেন ‘দলবদলে’র রাজনীতিকে কার্যত ‘গদ্দার, বিশ্বাসঘাতক’ বলে তোপ দেগেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। পাল্টা যুক্তি শানাতে কসুর করেনি তৃণমূলও। মঙ্গলবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে একে অন্যের প্রতি তোপ দাগা। বায়রন বিশ্বাসের এই দলবদলকে রাজ্যের জনগণের সঙ্গে ‘চরম বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে তোপ দাগেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা, সাংসদ জয়রাম রমেশ। টুইট করে রমেশ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের টিকিটে ঐতিহাসিক জয়ের মাত্র ৩ মাসের মাথায় বায়রন বিশ্বাসকে লোভ দেখিয়ে ভাঙাল তৃণমূল। এটা সাগরদিঘির ভোটারদের সঙ্গে পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা। এর আগে একই ধরনের চোরাশিকারের ঘটনা ঘটেছে মেঘালয়, ত্রিপুরা, গোয়ার মতো একাধিক রাজ্যে। এই ধরনের পদক্ষেপ বিরোধী ঐক্যকে মজবুত করে না। বরং বিজেপির উদ্দেশ্যই পূরণ করে।’ ঘাসফুল শিবির আদতে বিজেপির হয়েই কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন রমেশ।

পালটা কংগ্রেসকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনও। তাঁর কথায়, ‘বিজেপির টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের নেতারা। কংগ্রেস তাঁদের নেতাদের ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে তৃণমূলের কোনও ভূমিকা নেই। ওদের বিধায়কই বলছে কংগ্রেসে কাজ করা যাচ্ছে না। এসব নিয়ে ভাবুক কংগ্রেস।’ এর পরেই আসরে নামেন ডেরেক। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর একটি বয়ান তুলে ধরে টুইট করে বলেন, ‘দু সপ্তাহ আগেই কংগ্রেস প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়ার শপথ নিয়েছে কংগ্রেস। বিরোধী ঐক্য জড়িত বিশ্বাস কংগ্রেসই ভেঙেছে সর্বাগ্রে,  তার পরেও কী তারা আমাদের কাছে গোলাপের তোড়া আশা করে?  আর বিজেপির হাত শক্ত করার যাবতীয় অভিযোগ নিতান্তই হাস্যকর। তাঁদের চৈতন্য হোক।’ বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৩ মে কর্ণাটক নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কংগ্রেসকে দরাজ সমর্থনের প্রসঙ্গে, ১৫ মে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর করা প্রতিক্রিয়াকেই হাতিয়ার হিসেবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার চেষ্টা চালালেন ডেরেক৷ পরে সাংবাদিক মহলের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনও রকম বৈরিতা বা তিক্ততা চাই না। অধীর চৌধুরীর মন্তব্য নিয়ে এই জন্য আগে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি দলের তরফে। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে এ নিয়ে বার বার কটাক্ষ বা কোনরকম কুমন্তব্য এলে চুপ করে থাকবে না তৃণমূল।’

এরই মধ্যে বায়রন ইস্যুতে কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘাতের আবহে বিরোধী ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালালেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘রাজ্যে কিছু মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু কেন্দ্রে আমরা এক। জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যে শামিল তৃণমূল। যদিও রাজ্যস্তরে কিছু বাধ্যবাধকতা থেকেই থাকে, তবুও জাতীয় স্বার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবিরের সঙ্গেই কাজ করবে তৃণমূল কংগ্রেস।’ পটনার আসন্ন বিরোধী বৈঠক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নীতিশজী (নীতিশ কুমার) আমাকে গত পরশুদিন ফোন করেছিলেন। এর আগেও যখন এখানে এসেছিলেন তখনই আমি তাঁকে বলেছিলাম যে জয়প্রকাশ নারায়ণের জায়গায় একটা সভা করার। আমি ওনাকে জানিয়েছি আমি যাবো।’ মমতা এদিন এও জানিয়েছেন, ‘দিল্লিতে তো অনেক মিটিং হয়েছে কিন্তু সফল হয়নি। পটনাতে বিরোধী দলের মিটিং হবে। কেউ কেউ দিল্লিতে মিটিং করতে চেয়েছিল,  কিন্তু আঞ্চলিক দলগুলোর বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে। আঞ্চলিক দলের বৈঠক দিল্লিতে নয়,  রাজ্যগুলিতে হওয়া উচিত। আমি পটনার মিটিং-এ যাচ্ছি।’  সূত্রের খবর ১১ জুন পটনা পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। ১২ জুন অংশ নেবেন বিরোধী বৈঠকে। তবে বায়রন ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতির অলিন্দে যে নজিরবিহীন তিক্ততার আবহ সৃষ্টি হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল শিবিরে; জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে তা কতটা সুখকর বা ফলপ্রসূ হবে; সে নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular