জয়গাঁ : করোনা পরিস্থিতির পর পর্যটকদের ভুটানে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানারকম বিধিনিষেধ ও কর আরোপ করেছিল সরকার। কিন্তু তাতে পর্যটন মার খাওয়ায় নরম হয়েছে ভুটান সরকার। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ)-এর ক্ষেত্রে কিছু শর্তসাপেক্ষে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাড় মেলার পরেও ভুটানে পর্যটকের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। অন্তত ভুটান সীমান্তের জয়গাঁর ব্যবসায়ীরা তেমনই বলছেন।
প্রবল গরমে যেখানে দার্জিলিং বা সিকিম পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়, সেখানে অনেকটাই ফাঁকা জয়গাঁ। অনেকে শুধু জয়গাঁ সীমান্তের ওপারের ফুন্টশোলিং শহর ঘুরে ফিরে যাচ্ছেন। ভুটানে পর্যটকের সংখ্যা কমায় প্রভাব পড়ছে জয়গাঁর ব্যবসাতেও। ভুটানগেট খুললে ব্যবসা বাড়বে, এই আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখনও বাজার জমেনি বলে দাবি তাঁদের।
রবিবারও জয়গাঁয় দেখা গেল ভুটানগেট প্রায় ফাঁকা। গরমের জন্য শুনসান জয়গাঁর ভিউ পয়েন্ট গেরিগাঁও। ফুন্টশোলিংয়ে পেডেস্ট্রিয়াল টার্মিনালেও পর্যটক ছিলেন হাতেগোনা। বীরপাড়া থেকে ঘুরতে এসেছিলেন নুরি খাতুন। তাঁর বক্তব্য, বন্ধুরা মিলে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এখানে গরম কম হবে। কিন্তু এখানেও প্রচণ্ড গরম। বেশিক্ষণ থাকব না। একটু ফুন্টশোলিং পার্ক ঘুরে চলে যাব। গরম না কমলে কোথাও বেরোব না।
মার্চ মাসের শেষে প্রেস বিবৃতিতে ভুটান সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, ১৪ এপ্রিল থেকে ফুন্টশোলিং, সামচি সহ মোট চারটি সীমান্ত শহরে ২৪ ঘণ্টা বসবাসের জন্য মাথাপিছু ১২০০ টাকা এসডিএফ মকুব করা হচ্ছে। কিন্তু এই চার শহরের বাইরে গেলে অবশ্য এসডিএফ দিতে হবে বলে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়। তারপরেও আরও কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়। যারা ট্রেকিংয়ে যাবে, তাদের জন্য এসডিএফে প্রতি সাতদিনে ধাপে ধাপে ছাড় ঘোষণা করা হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছে ট্রিপল সেভেন পলিসি। একইভাবে সাধারণ পর্যটকরাও যদি দশদিন থাকেন, তাহলে পাঁচদিনের এসডিএফ নেওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া যাদের বয়স ৬ থেকে ১২ বছর তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছর তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ এসডিএফ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতসব কিছুর পরেও পর্যটক সংখ্যা বাড়েনি। এসডিএফ সম্পূর্ণ মকুব না হলে পরিবার নিয়ে পর্যটকরা আসতে চাইছেন না।
ফুর্বা ভুজেল নামে জয়গাঁর এক পর্যটন ব্যবসায়ীর বক্তব্য, আগে আমাদের কথা ভেবে তারপর বাকিদের কথা ভুটান চিন্তা করতেই পারত। এমন নয় যে কেউ ভুটানে ঘুরতে আসছে না। কিন্তু প্রতিদিন পাঁচ-দশজন করে ভুটানে গেলে আমাদের ব্যবসায় কোনও লাভ হয় না। জয়গাঁর আরেক পর্যটন ব্যবসায়ী সুরেশ ঠাকুরির বক্তব্য, টানা ভুটানে থাকলে এসডিএফে ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভুটানে ১০-১৫ দিন থাকতে কে আসে? ছয়দিন থেকেই চলে যান পর্যটকরা। প্যাকেজ টুরিজমে এসডিএফ ছাড় ভুটানের ভাঁওতাবাজি। এখনও সেটা কার্যকর হয়নি। কীভাবে পর্যটকদের সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলব?
লকডাউনের আগে জয়গাঁর ট্যাক্সিচালকরা ভুটানে নিয়ে গিয়ে পর্যটকদের সাইট সিন করাতে পারতেন। কিন্তু এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে জয়গাঁর ভুটানগেটের সামনে নামিয়ে দেওয়াই ট্যাক্সিচালকদের কাজ। ফলে তাঁদের আয়ও কমেছে। সুমন রাই নামে ট্যাক্সিচালকের বক্তব্য, আগে জয়গাঁ বা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে ফুন্টশোলিংয়ের আশপাশ ঘুরিয়ে প্রতি ট্রিপে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করতাম। এখন সেটাও বন্ধ। শুধু তেলের দামটা কম বলে ফুন্টশোলিংয়ে গাড়িতে পেট্রোল-ডিজেল ভরাতে যাই।