দিনহাটা: টিনের বাড়ি। তাতে একটি মাত্র ঘর। সেখানেই তিনজনের বসবাস। সামান্য বৃষ্টিতে ঘরে জল ঢুকে যায়। তাই মেঝেতে বস্তা পাতা থাকে বারো মাস। দুর্বল আলোয় ঘরের সম্পূর্ণ অন্ধকার পর্যন্ত কাটে না। এহেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেবশ্রী রক্ষিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করেছে। দিনহাটা সোনিদেবী জৈন হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে ৪৪৫ নম্বর পেয়ে দিনহাটা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এই মেয়ে নজর কেড়েছে সকলের।
বাবা দীপু রক্ষিত আগে যা-ও বা অনেক ছাত্র পড়াতেন, কিন্তু এখন চোখে গুরুতর সমস্যা ধরা পড়ায় ছাত্র সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুই। সংসারের হাল ধরেছেন দেবশ্রীর মা পম্পা রক্ষিত। তিনি বিড়ি বাঁধেন। অভাব নিত্যসঙ্গী। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় পাশে দাঁড়ান চারজন শিক্ষক। তাঁরা বিনা পয়সায় দেবশ্রীকে পড়িয়েছেন। নির্দিষ্ট রুটিন না থাকলেও নিয়মিত দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা পড়াশোনা করত বলে সে জানিয়েছে।
টিনের ঘরে এখন তীব্র গরম। কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে মুছতে দেবশ্রী বলে, ‘একবার দিনহাটা মহকুমা শাসকের অফিসে গিয়ে এক উচ্চপদস্থ মহিলা অফিসারকে দেখে উৎসাহিত হয়েছিলাম। সেই থেকেই স্বপ্ন, ইউপিএসসি পরীক্ষা পাশ করব। দরিদ্র মানুষের সেবা করতে চাই।’ সমাজসেবার কাজে অবশ্য দেবশ্রী এখন থেকেই যুক্ত। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য হিসেবে। দিনহাটা কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়ে দেবশ্রী একইসঙ্গে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে।
মেয়ের সাফল্য প্রসঙ্গে পম্পা বলেন, ‘কোনওমতে সংসারটা চলে। মাথার ওপরের ছাদ যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে। ঠিক করে খাওয়াই জোটে না, মেয়েকে পড়াব কী করে? আমার স্বামীর শরীর ভালো না। কেউ পাশে না দাঁড়ালে আগামীতে সমস্যায় পড়ব।’ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেবশ্রী অবশ্য দাঁতে দাঁত চেপে নিজের লড়াইটা নিজেই লড়তে চায়। টিউশন পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাতে সে রাজি। দেবশ্রীর ফলে খুশি সোনিদেবী জৈন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু কর্মকার। তাঁর কথায়, ‘দেবশ্রীকে নিয়ে আমাদের আশা ছিলই। নিয়মিত ক্লাস করত। পরিশ্রমের ফল পেয়েছে।’