উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ সম্প্রতি প্রায় ৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষিকার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই রায়ের বিরোধীতা করে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছে পর্ষদ ও চাকরিচ্যুত প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। এবার রায় পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবার জনাকয়েক চাকরিচ্যুত এসেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। চাকরিচ্যুতরা বিচারপতির কাছে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান। বিচারপতি স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই।
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তবু আশা ছাড়তে রাজি নন চাকরিচ্যুত প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। রায় পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবার তাঁরা এসেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। দীর্ঘ কথোপকথনের পর বিচারপতি তাঁদের জানিয়ে দিলেন, বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই। আমার রায় নিয়ে আপত্তি থাকলে উচ্চতর বেঞ্চে আবেদন করুন।
এদিন কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ভিড় করেছিলেন চাকরিহারা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা। এরা প্রত্যেকেই পার্শ্বশিক্ষক থেকে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ী চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গেই বিচারপতির সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয়। বিচারপতির কাছে এঁরা দাবি করেন, সেবারের নিয়োগে পার্শ্ব শিক্ষকদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা ছিল। এখন তাঁদের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে। তারা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেন, ধর্মাবতার আপনি আমাদের দেখুন। আমাদের পরিবার রয়েছে। এখন চাকরি বাতিল হলে কোথায় যাব? আগে আমরা পার্শ্বশিক্ষক (প্যারা টিচার) ছিলাম। সেই সময় আলাদা সংরক্ষণ নীতি ছিল। আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি। তা হলে আমাদের কী হবে? যদি কেউ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে থাকে তাহলে আমরাও চাই তাদের শাস্তি হোক। কিন্তু আমাদের কী হবে? আমরা তো যোগ্য।
চাকরিচ্যুতদের বক্তব্য শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমি দুঃখিত আপনাদের অসুবিধার জন্য। এই রায়ের উপর আমার এখন আর কিছু করার নেই। রায় ঘোষণা করা হয়ে গেলে কিছু না করার থাকে না। শুধুমাত্র সংশোধন করা যেতে পারে।
এদিন তিনি আরও বলেন, এই নিয়োগের ছত্রে ছত্রে দুর্নীতি হয়েছে। কোনও একটা-দুটো কারণ নয়। যিনি মামলা করেছেন, তিনি অপ্রশিক্ষিতদের বিষয়টি উত্থাপন করে মামলা করেছেন। তাই আমার এই রায়। প্রশিক্ষিতদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই এই মামলায়। আমার রায় নিয়ে আপত্তি থাকলে উচ্চতর বেঞ্চে আবেদন করুন। রায় ঘোষণা করা মানে এখন বিষয়টি আমার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
এরপর এক শিক্ষিকা বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, আপনিই দেখুন আমাদের বিষয়টি। আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি। তা হলে আমাদের কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি বলেন, ‘এ নিয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। আমাকে বাধ্য করবেন না। আমি মন্তব্য করলে রাজনৈতিক বক্তব্য হয়ে যাবে। কারণ, একটা বা দুটো নয়। এতটাই বেআইনি ভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল যা অকল্পনীয়। কত দুর্নীতির কথা বলব? প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে চাকরি বিক্রি হয়েছে। ওই দালালদের কাছে এত কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এল? যাঁরা দোষী, তাঁদের কাছে গিয়ে বলুন। হাজারে হাজারে চাকরি বিক্রি হয়েছে। আমার কাছে বলে লাভ নেই।
এরপর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আপনারা যোগ্য হলে আবার সুযোগ পাবেন। আমি তো আপনাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছি না। নতুন করে এই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলে সমস্ত যোগ্যরাই সুযোগ পাবেন। আপনারা চাইলে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারেন। আমার আর এখন কিছু করার নেই।