সানি সরকার, শিলিগুড়ি : ঐতিহ্য ফিরছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে-তে। পুরোনো প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর পথে হঁাটতে চলেছে ইউনেসকো (ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন)-র হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়া ডিএইচআর। ব্রিটিশ আমলে ১৯৪৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘টার্নটেবিল প্রোজেক্ট’ ফিরিয়ে আনছে সংস্থাটি। মাঝে ৮১ বছরের ব্যবধান।
এর মাধ্যমে অনায়াসে টয়ট্রেনের কোচের মুখ ঘোরানো সম্ভব হবে। শুরুতে কার্সিয়াংয়ে টার্নটেবিল গড়ে তোলা হলেও, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে দার্জিলিং ও রংটংয়ের মতো বেশ কয়েকটি স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর ঋষভ চৌধুরীর বক্তব্য, ‘ট্রেনের গতিমুখ পরিবর্তন দেখতে টার্নটেবিলের সামনে ভিড় জমে যেত আগে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে কোচের মুখ ঘুরিয়ে নতুন ইঞ্জিন জুড়ে উলটোপথে ট্রেন চালানো যেত সহজে। এতে সময়েরও সাশ্রয় হয়। ইতিহাসের সাক্ষী- এমন বিভিন্ন প্রযুক্তিকে পর্যায়ক্রমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’
বছর শুরুর আগেই নতুন রূপে ‘বেবি সেবক’-কে সামনে আনে ডিএইচআর। ১৮৮০ সালে তৈরি হওয়া স্টিম ইঞ্জিন বেবি সেবক বাতিল হয়ে যায় বিংশ শতাব্দীর মাঝপথে। বল-বেয়ারিং সহ নানা যন্ত্রপাতির পরিবর্তন ঘটায় ওই স্টিম ইঞ্জিনকে সচল করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। ইংল্যান্ডের একটি সংস্থা এবং ইউনেসকো’র সহযোগিতায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন লুকে বেবি সেবককে সামনে আনা হয়। পর্যটকদের নজর কেড়ে এখন দার্জিলিং স্টেশনে চাকা গড়াচ্ছে ওই ইঞ্জিনের। প্রায় তিন মাস পর নয়া সিদ্ধান্তে ফের চমক।
এই প্রযুক্তি চালু হওয়ায় যেমন এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে পর্যটকদের, তেমন সময় সাশ্রয় হবে ডিএইচআর-এর। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বেশ কিছুক্ষেত্রে ঝক্কি এড়াতে পারবে রেল। মাঝেমধ্যেই মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়া বা অন্য যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে সড়কপথে গন্তব্যে পাঠাতে হয়। পাশাপাশি, ট্রেনটিকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে যেতে বেকায়দায় পড়ে রেল। রংটং ও চুনাভাটির মতো এলাকায় টার্নটেবিল তৈরি করা গেলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে, মনে করেন কর্তারা।
তঁাদের বক্তব্য, নিকটবর্তী টার্নটেবিলে কোচ ঘুরিয়ে নতুন ইঞ্জিনের সাহায্যে ট্রেন ফিরতি পথে চালানো সম্ভব। ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর জানালেন, পুরোনো প্রযুক্তিকে ফের কাজে লাগাতে ত্রুটি রাখতে চাইছে না ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। পুরানো আরও বেশ কিছু প্রযুক্তি নতুন মোড়কে লঞ্চ করা হবে ভবিষ্যতে।