অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি শহরের কথা উঠলে প্রথমেই মনে আসে রাজবাড়ির গেট অর্থাৎ সিংহদুয়ার। চুনসুরকি দিয়ে তৈরি জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার (সিংহদুয়ার) জেলা শহরের তো বটেই, উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রতীক। কিন্তু এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিংহদুয়ারের গায়ে জমেছে আগাছা, খসে পড়ছে পলেস্তারা। কোথাও বা দেওয়ালের নকশার পিলার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্ট্যাচুগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। বেহাল অবস্থা সিংহদুয়ার সংলগ্ন উদ্যানেরও।
যদিও পুরসভার চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল বলেন, ‘ইতিমধ্যে রাজবাড়ির সিংহদুয়ার, উদ্যান– সব জায়গা ভিজিট করা হয়েছে। আলোচনাও হয়েছে সৌন্দর্যায়নের কাজ নিয়ে। পাশাপাশি ইচ্ছে রয়েছে বসার জায়গা করে ফুড কোর্ট রাখার। পুরসভার তরফে নিশ্চয়ই কাজ করা হবে যাতে জলপাইগুড়ি শহরের ঐতিহ্য হারিয়ে না যায়।’
পাহাড়পুর থেকে রাজবাড়ির দিকে আসতে গেলেই চোখে পড়বে একটি ফলক, যাতে লেখা রয়েছে রাজবাড়ি উদ্যান সৌন্দর্যায়ন, ২৬ জানুয়ারি ২০০৯, যা তৎকালীন পুরপ্রধান মোহন বোস উদ্বোধন করেছিলেন। তারপর কেটেছে ১৬টা বছর। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুর৷ যেমন, স্ট্যাচুর হাতির গায়ের রং নষ্ট হয়েছে, বাইসনের লেজের অর্ধেকাংশই গায়েব।
এমন অবস্থায় প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী। শহরের বাসিন্দা সুমিত মল্লিকের কথায়, ‘সিংহদুয়ারের দিকে পুরসভার নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ি, সিংহদুয়ারের সঙ্গে শহরবাসীর ইমোশন জড়িয়ে আছে। শুনেছি শহরকেন্দ্রিক ট্যুরিজম নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। সেখানে মানুষ যদি ভাঙা, রং উঠে যাওয়া, শুকনো ডালপালা দেখে তখন শহরের মর্যাদা কোথায় যাবে?’
১০-১২ বছর আগে সিংহদুয়ার দু’একবার রং করা, মেরামত হলেও সেই অর্থে এখন আর কোনওরকম ভূমিকা দেখা যায়নি পুর কর্তৃপক্ষের। কোথাও দেওয়াল ভেঙে উদ্যানের ভেতরে চা কিংবা ভাতের হোটেল খুলে বসেছেন কিছু ব্যবসায়ী৷
বাসিন্দা বিনোদ কুমারের কথায়, এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পর সিংহদুয়ারের সঙ্গে থাকা উদ্যানটি দেখে কষ্ট হয়। নামেই উদ্যান। তাছাড়া কিছুই নেই৷ জঙ্গলে ভর্তি। গাছগুলোর কোনওরকম যত্ন নেই। শুকনো ডালগুলো কোনও স্ট্যাচুর গায়ে লেগে রয়েছে। পুরসভার আশ্বাস দেওয়া ছেড়ে এদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
শহরবাসীর ইচ্ছে, পুরসভা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ করে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করুক।