রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: কর্মবিরতি ঘোষণা করে আন্দোলনে জুনিয়ার ডাক্তাররা (Doctors Protest)। তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন সিনিয়ার চিকিৎসকরাও। ফলে সোমবার বহু সিনিয়ার ডাক্তারও ডিউটি না করে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে, এই ফাঁকেই বেশ কিছু সিনিয়ার চিকিৎসক দিব্যি মেডিকেলের পাঁচিলের ওপারে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে চেম্বারে রোগী দেখলেন। মেডিকেলে বহির্বিভাগে দেখাতে না পেরে পাঁচিলের ওপারে গিয়ে চেম্বারে সেই চিকিৎসককেই অনেক রোগী ‘ফি’ দিয়ে দেখাতে বাধ্য হয়েছেন। মেডিকেল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক অবশ্য বলেছেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। চিকিৎসকরা হাসপাতালেই ছিলেন।’
উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে (North Bengal Medical College) যাতায়াতের জন্য দু’দিকে দুটি বড় গেট রয়েছে। পাশাপাশি পাঁচিল কেটে বিভিন্ন জায়গায় আরও বেশ কিছু ছোট ছোট পথ বের করা হয়েছে। যেগুলি নিয়ে বহুদিন ধরে অভিযোগ উঠেছে। মেডিকেলের জুনিয়ার ডাক্তারদের অনেকেরই বক্তব্য, পাঁচিল কেটে তৈরি করা রাস্তাগুলি দিয়ে বহিরাগতরা যে কোনও সময় মেডিকেলে ঢুকে পড়ে। এগুলি বন্ধ করা প্রয়োজন। বহুবার এসব নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়নি।
অভিযোগ, পাঁচিলের ওপারে প্রচুর ওষুধের দোকান, প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি গজিয়ে উঠেছে। সেগুলির ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই কর্তৃপক্ষ এই অবৈধ গেটগুলি বন্ধ করে না। আবার এখানকার একাধিক ওষুধের দোকান এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আড়ালে চিকিৎসকদের চেম্বার রয়েছে। সেখানে মেডিকেলের চিকিৎসকরাই নিয়মিত রোগী দেখেন। তাও আবার মেডিকেলের কাজের সময়। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ, পাঁচিলের ওপারে চেম্বারগুলিতে রোগী এলেই চিকিৎসকের কাছে ফোন চলে আসে। মেডিকেলে বহির্বিভাগ বা অন্তর্বিভাগে রোগী দেখতে ব্যস্ত চিকিৎসক চেম্বারের ফোন পেয়েই একটু আসছি বলে সেখানে চলে যান। দু’তিনজন রোগী দেখে কিছু টাকা পকেটে পুরেই আবার মেডিকেলে চলে আসছেন। এই রীতি দু’চার বছরের নয়, দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। মেডিকেলে রীতিমতো এই ওষুধের দোকান ও চেম্বারে রোগী নিয়ে আসার জন্য দালালচক্রও সক্রিয় রয়েছে।
আরজি কর মেডিকেলের ঘটনা নিয়ে মেডিকেলে আন্দোলন চালাচ্ছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। প্রথম থেকেই সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন সিনিয়ার ডাক্তাররা। আর এর জেরে এদিন জুনিয়ার ডাক্তাররা যেমন বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগে যাননি, তেমনই অনেক সিনিয়ার ডাক্তারকেও বহির্বিভাগে দেখা যায়নি। কিন্তু সেই চিকিৎসকরা মেডিকেলে এসে হাজিরা দিয়েছেন। তার পরেই পাঁচিলের ওপারে প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখেছেন। কয়েকজন চিকিত্সক আবার জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনস্থলে গিয়ে মুখ দেখিয়েই সুপারের অফিসের উলটো দিকের পাঁচিল পেরিয়ে ওষুধের দোকানের চেম্বারে বসেছেন। এদিন রোগী পরিচয়ে সেই চেম্বারে গিয়ে দেখা গেল সার বেঁধে রাখা চেয়ারে প্রচুর রোগী বসে রয়েছেন। একাধিক রোগীর বক্তব্য, ‘মেডিকেলে ডাক্তার না পেয়ে এখানে এসেছি। বলা হয়েছে ওই ডাক্তারই এখানে দেখবেন। তাই বসে রয়েছি।’