শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ভুটান থেকে নেমে আসা নদী নিয়ে ভারত-ভুটান জয়েন্ট টেকনিকাল টিমের সমীক্ষা এবং আলোচনা শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে। চলবে বুধবার পর্যন্ত। চালসার একটি বেসরকারি রিসর্টে আলোচনার ফাঁকে ডলোমাইট প্রভাবিত ডুয়ার্সের (Dooars) চা বাগান পরিদর্শনেও যাবে যৌথ প্রতিনিধিদল। রাজ্য সেচ দপ্তরের এক শীর্ষকর্তা জানান, জয়েন্ট টেকনিকাল টিমের আলোচনা এবং তাদের রিপোর্ট পরবর্তীতে ভারত-ভুটান জয়েন্ট গ্রুপ অফ এক্সপার্ট কমিটিতে আলোচনা হবে।
সোমবার তাঁরা যাবেন তুলসীপাড়া চা বাগানে (Tuslipara Tea Garden)। পাশাপাশি সেন্ট্রাল ডুয়ার্স, রিয়াবাড়ির মতো মারাত্মক ডলোমাইট প্রভাবিত চা বাগানগুলিও এই তালিকায় রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ‘ডুয়ার্সের বহু চা বাগান ভুটান থেকে নেমে আসা নদীবাহিত ডলোমাইটের কারণে কার্যত অস্তিত্বের সংকটে। শুধু জয়েন্ট টেকনিকাল টিম বা জয়েন্ট গ্রুপ অফ এক্সপার্ট কমিটির মাধ্যমে বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করা এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দ্রুত ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হোক।’
নদীভাঙন, ডলোমাইটের প্রভাব, বন্যা, বৃষ্টি সহ আরও কয়েকটি ইস্যুতে প্রত্যেকবছর ভারত-ভুটান জয়েন্ট টেকনিকাল টিম বৈঠক ডাকে। গতবছর সেই বৈঠক হয়েছিল ভুটানে। সেখানে প্রতিবেশী দেশের ভেতরে নদীগুলির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এবার হচ্ছে ভারতে। চা মহল জানাচ্ছে, ভুটান থেকে নেমে আসা নদীর ডলোমাইটে বর্তমানে ডুয়ার্সের এক ডজনেরও বেশি চা বাগানের অস্তিত্ব বিপন্ন। এই তালিকায় রয়েছে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স, রিয়াবাড়ি, তুলসীপাড়া, গ্যারগান্ডা, ধুমচিপাড়া, মাকড়াপাড়া, রামঝোরা, সিংহানিয়া ইত্যাদি। তুলসীপাড়া চা বাগানের কর্ণধার সুরজিৎ বক্সীর কথায়, ‘আমাদের বহু চা গাছ ডলোমাইটের কারণে মরে যাচ্ছে। সোমবার জয়েন্ট টেকনিকাল টিম আসবে বলে জানতে পেরেছি। আমাদের সমস্যার কথা সবিস্তারে জানানো হবে।’
অন্যদিকে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানের মাথাব্যথার কারণ, দু’দিক দিয়ে বয়ে চলা পানা এবং বাসরা নদী। ফি বছর বর্ষায় ভয়ংকর হয়ে ওঠা ওই নদীর কারণে বহু চা আবাদি জমি সেখানে তলিয়ে যাচ্ছে। জল নেমে গেলে থিতিয়ে থাকা ডলোমাইটের কারণে যে চা গাছগুলি টিকে থাকছে সেগুলিও পরে শুকিয়ে যাচ্ছে। সেখানকার ম্যানেজার শান্তনু বসু বলেন, ‘জয়েন্ট টেকনিকাল টিম আমাদের এখানেও আসতে পারে বলে খবর রয়েছে। ডলোমাইট এই বাগানকে একেবারে নষ্ট করে দিচ্ছে।’
বানারহাটের রিয়াবাড়ি চা বাগানের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া রেতি-সুকৃতি নদীবাহিত ভুটানের ডলোমাইট সেখানে ১৫০ হেক্টর চা আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিয়েছে বলে বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সেখানকার ম্যানেজার আনন্দ বসু বলেন, ‘এককথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। চা চাষের জন্য যেখানে মাটির পিএইচ মাত্রা সর্বোচ্চ ৪.৫ প্রয়োজন, সেই জায়গায় আমাদের এখানে সেটা ৭.৫-এরও বেশি।’ মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে নদী লাগোয়া গাছগুলি শুকিয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, বাঁধ ভেঙে ওই নদী দু’বার বাগানকে প্লাবিত করে। বর্তমানে নদীখাত এতটাই উঁচু যে বাগানের অবস্থান নীচু ঢালে হয়ে গিয়েছে। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। জয়েন্ট টেকনিকাল টিমের এই পরিদর্শনকে স্বাগত জানিয়ে চা বণিকসভা আইটিপিএ-র ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রামঅবতার শর্মা জানান, ডলোমাইট এখন সীমান্তের বাগানগুলির কাছে আতঙ্কের আরেক নাম। ডিবিআইটিএ’র সচিব শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ও একই কথা বলেন।