শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ডুয়ার্সের আইকন হিসেবে পরিচিত চা শিল্প গোড়াপত্তনের সার্ধশতবর্ষে পা রেখেছে। ১৫০ বছরের এই সোনালি অধ্যায়ে পশ্চিমের তিস্তা (Teesta) থেকে শুরু করে পূর্বের সংকোশ নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। তবে আজও ডুয়ার্স চায়ের আলাদা কোনও ব্র্যান্ড তৈরি হয়নি। জিআই ট্যাগও মেলেনি। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মালিক-শ্রমিক সব মহলে আক্ষেপের অন্ত নেই। এমন আবহে ডুয়ার্স চায়ের জয়গাথা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি ডুয়ার্স টি কনক্লেভের (Dooars Tea Conclave) আয়োজন করেছে। শনিবার লাটাগুড়ির একটি বেসরকারি রিসর্টে চা বণিকসভা, টি বোর্ড, চা গবেষণা সংস্থা (টিআরএ) ও শিক্ষাবিদ সহ আরও নানা মহলকে নিয়ে ওই আলোচনা হবে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘১৫০ বছরের মাইলস্টোন ছোঁয়ার পর ডুয়ার্সের চা এখনও নানাভাবে প্রচারের আলোর বাইরে। কয়েক লক্ষ মানুষের রুটিরুজির সংস্থান এই শিল্প ভালো থাকলে এখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে। ক্ষুদ্র চা চাষ সহ ডুয়ার্সের বড় চা বাগানগুলির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, উদ্ভূত সমস্যা এবং তা থেকে পরিত্রাণের উপায়ের ওপর নীলনকশা তৈরির প্রচেষ্টার জন্য এই আয়োজন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ইংরেজদের হাত ধরে প্রথমে পাহাড় ও পরে তরাই এলাকা হয়ে ডুয়ার্সে চা শিল্পের বিস্তার হয়। নথি অনুযায়ী, এখানে ১৮৭৪ সালে প্রথম গজলডোবা চা বাগান গড়ে ওঠে। যদিও তিস্তার আগ্রাসনে ডুয়ার্সের চা শিল্পের গর্ভগৃহ ওই বাগানটির এখন কোনও অস্তিত্ব নেই। এরপর ধীরে ধীরে ফুলবাড়ি (বর্তমানে লিসরিভারের ডিভিশন), ডালিমকোট, বাগ্রাকোট, কুমলাই, ডামডিম, ওয়াশাবাড়ি, এলেনবাড়ি, মানিহোপ, পাতাবাড়ি, রানিচেরা, বাতাবাড়ি, বামনডাঙ্গা ও ডামডিমের মতো আরও অনেক বাগান গড়ে ওঠে। জলপাইগুড়ির মুন্সি রহিম বক্স ১৮৭৭ সালে জলঢাকা গ্র্যান্ট নামে চা চাষের জন্য ৭৩৮ একর জমির লিজ পান। পরের বছর কাঠ ব্যবসায়ী বিহারীলাল গঙ্গোপাধ্যায় আলতাডাঙ্গা গ্র্যান্টের লিজ পান। বর্তমানে যা জলঢাকা-আলতাডাঙ্গা চা বাগান নামে পরিচিত। ১৮৭৮ সালে কলাবাড়ি চা বাগান কেনেন প্রথিতযশা চিকিৎসক নীলরতন সরকার। পরে তা তারিণীপ্রসাদ রায়কে বিক্রি করেন। ১৮৭৯ সালে জলপাইগুড়িতে প্রথম ভারতীয় শিল্পপতিরা জয়েন্ট স্টক কোম্পানি গঠন করেন। সেসময় এখানে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর বাবা ভগবানচন্দ্র বসু কর্মরত ছিলেন। তিনি চা শিল্পে জলপাইগুড়ির শিল্পপতিদের এগিয়ে আসতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর আনুকূল্যে প্রথম পুরোপুরিভাবে ভারতীয়দের নিয়ে গঠিত জলপাইগুড়ির টি কোম্পানি ১৮৭৯ সালে মোগলকাটা চা বাগান স্থাপনের পথে এগিয়ে আসে।
শতাব্দীপ্রাচীন চা বণিকসভা আইটিপিএ-র উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর কথায়, ‘ডুয়ার্সের চা শিল্পের ইতিহাস আলোকময় হলেও এখনও আলাদা করে কোনও ব্র্যান্ড গড়ে ওঠেনি। ফলে বিপণন মার খাচ্ছে।’ গুডরিক গ্রুপের জেনালের ম্যানেজার জীব পান্ডে জানান, ডুয়ার্স চায়ের লোগো থাকলেও অসম বা দার্জিলিংয়ের মতো আলাদা ব্র্যান্ড নেই। যদিও এখানকার চা স্বাদে গন্ধে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। শনিবারের কনক্লেভে আলোচনার পাশাপাশি জলপাইগুড়ি জেলার চা শিল্প ও ১৫০ বছর শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হবে। একটি তথ্যচিত্র বড় পর্দায় প্রদর্শিত হবে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের পাশাপাশি চা শিল্পে আজীবন অবদানের জন্য তিনজন বর্ষীয়ান ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।