আলিপুরদুয়ার: ডুয়ার্সের আদিবাসী জনজাতির কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সূচনা করা হয়েছিল ডুয়ার্স উৎসবের। সেই উৎসব বিশ্ব ডুয়ার্স উৎসবের তকমা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিও উঠেছে। আর সেই ডুয়ার্স উৎসবের এক্সপো মেলায় ভাড়া করা তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পী দিয়ে চলছে উদ্দাম নৃত্য। আর এই নৃত্যকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক।
কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা? দেখা গেল, ডুয়ার্স উৎসবের ময়দানে এক্সপো মেলার মাঠে শেষের দিকে লটারির আসর বসেছে। এই লটারির দোকানে হরেকরকম প্লাস্টিক, স্টিল, পিতলের বাসন দিয়ে চলছে লটারি খেলা। সেই লটারির আসরেই এই নাচাগানার আয়োজন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ক্রেতাদের আকর্ষণ করা। তৃতীয় লিঙ্গের এক শিল্পীকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে সেই লটারি দোকানের কর্তৃপক্ষ। ওই শিল্পী দিয়ে একটি মঞ্চে চলছে নৃত্য প্রদর্শন। চটুল সেই নৃত্যর টানেই ছেলেছোকরাদের ভিড় উপচে পড়ছে। আর ভিড়ের মধ্যে হুহু করে বিকোচ্ছে লটারির টিকিটও। ব্যবসায়ীর উদ্দেশ্য সার্থক।
ডুয়ার্স উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি।’ তাঁর আশ্বস, ‘আমরা ওই লটারি দোকানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করব। এভাবে কোনও নৃত্যের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে কমিটির কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে। বিষয়টি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।’
উৎসব কমিটির তরফ থেকে লটারি দোকান বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এমন কোনও চটুল নাচের আসর যে বসানো হবে, সেটা মেলার আয়োজকদের জানা ছিল না। ডুয়ার্স উৎসবের প্রথম থেকেই ওই শিল্পীকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন দোকানের মালিক। বাপি দাস নামের ওই ব্যক্তি আলিপুরদুয়ারের জিৎপুরের বাসিন্দা। তাঁর দোকানেই তৃতীয় লিঙ্গের ওই শিল্পী দিয়ে বিচিত্র সব পোশাক পরিয়ে চলছে নৃত্য প্রদর্শন। কেন এমন আয়োজন করেছেন? জানতে চাওয়া হলে সেই দোকানের মালিক বাপি মেনে নিয়েছেন যে, উৎসব কমিটি নৃত্য প্রদর্শনের কোনও অনুমতি দেয়নি। তবে তাঁর যুক্তি, যাঁরা এক্সপো মেলার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা তো কোনও নিষেধও করেননি।
উৎসবের মাঠে এক্সপো মেলায় গিয়ে দেখা গেল, লটারির ওই দোকানের সামনে অল্পবয়সিদের ভিড় উপচে পড়ছে। দোকানের মধ্যে একটি ছোট মঞ্চে স্বল্পবসনা সেই শিল্পী চটুল হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ করছে। এমন ঘটনা নিয়ে বিরক্ত শহরের বিশিষ্ট বাসিন্দারা। আলিপুরদুয়ারের বর্ষীয়ান আইনজীবী বাবুল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি জানতে পারলাম ডুয়ার্স উৎসবকে কেন্দ্র করে লটারির দোকানে তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পী ভাড়া করে নিয়ে এসে চটুল নৃত্য প্রদর্শন হচ্ছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। এটা ডুয়ার্সের কৃষ্টি, সংস্কৃতি আদবকায়দা নয়৷ এই চটুল নৃত্য যুবসমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। উৎসব কমিটির উচিত ওই লটারির দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা। আগে ডুয়ার্স উৎসবে ডুয়ার্সের জনজাতি, ভাষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি পর্যটন নিয়ে নানা ধরনের টক শো করা হত। এখন সে সব বন্ধ। সেই যায়গায় এখন চটুল নৃত্য প্রদর্শন হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়।’
উৎসবের আরেক কর্তা সঞ্জীত ধর বলেন, ‘এই ঘটনার কথা জানি না। যদি এই ধরনের কোনও ঘটনা কেউ ঘটিয়ে থাকে তবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’