প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারে ভবঘুরেদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে ব্রাউন সুগার, সিডেটিভ ড্রাগ। এতদিন শহরে পড়ুয়াদের মধ্যে মাদকের নেশার বাড়বাড়ন্তের খোঁজ মিলছিল। এবার ভবঘুরেরা মাদক পাচারকারীদের টার্গেট হয়ে উঠেছে। আলিপুরদুয়ার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন করে অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’
বিষয়টি সামনে আসে গত সপ্তাহের শুক্রবার দুপুরে। আলিপুরদুয়ার মনোজিৎ নাগ বাস টার্মিনাসের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক বিপ্লব সরকার, পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর সহ স্থানীয় কাউন্সিলারদের একাংশ। সেসময় বাস টার্মিনাসে বেহাল অফিসের নীচে এক ভবঘুরেকে সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা হকচকিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে মাদকের বিষয়টি জানা যায়।
প্রশ্ন উঠেছে, বাস টার্মিনাসে ভবঘুরেদের কাছে কীভাবে মাদক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে ভবঘুরেদের সহযোগিতায় মাদকের ব্যবসা চলছে বলে মনে করছেন স্থানীয়দের একাংশ। পেডলাররা এই ভবঘুরেদের সহযোগিতায় ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে। এতে ক্রেতাদের অর্ডারমতো মাদক পৌঁছানোর কাজ করলেও ধরা পড়ার ভয় থাকে না। কিন্তু দিনদুপুরে জনবহুল এলাকায় মাদকের নেশা কী করে সম্ভব? স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর সেখানে নেশার অবাধ আসর বসে।
মাদক কারবারিরা মনোজিৎ নাগ বাস টার্মিনাস, নিউ আলিপুরদুয়ার, প্যারেড গ্রাউন্ড সংলগ্ন এলাকা, ভোলারডাবরির অসমগেট এলাকা ছাড়াও জংশনের একাধিক জায়গায় মাদকের রমরমার অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাদকের এই সরবরাহের মূলকেন্দ্র মালদা, শিলিগুড়ি এবং কোচবিহার। এই এলাকাগুলি থেকে রেলপথ কিংবা সড়কপথে মাদক পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোচবিহার থেকে আবার আলিপুরদুয়ারের দূরত্ব কম হওয়ায় বাইকে করেও পাচারকারীরা অর্ডার জায়গামতো পৌঁছে দিচ্ছে।
দিনেরবেলা স্কুটি কিংবা বাইকে খুচরোয় ব্যবসা চলে। অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর চারচাকার বড় গাড়িতে বড় ব্যবসায়ীদের লেনদেন চলে। শহরের একাধিক বড় ব্যবসায়ীর ঠিকানা আলিপুরদুয়ার জংশনের বিভিন্ন এলাকা। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার-১ এবং ২ ব্লক ছাড়াও ফালাকাটা, কালচিনি, কুমারগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় পেডলাররা ছড়িয়ে রয়েছে বলে খবর। এই এলাকাগুলির তরুণ-তরুণীরা গ্রুপ পেডলার হিসেবেও কাজ করে। সিগারেটের প্যাকেটে প্লাস্টিকের মোড়ক তৈরি করে সেগুলি বিক্রি করতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তবে গত কয়েকমাস ধরে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন। অগাস্ট মাসে ৫০ গ্রাম ব্রাউন সুগার সহ আলিপুরদুয়ার থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মাঝেমধ্যে ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে মাদক পাচার করত। তার দিনকয়েক আগে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে সাবানের কেসের আড়ালে মাদক পাচার করার সময় এক মহিলা সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ধরপাকড়ের পাশাপাশি জেলা পুলিশের তরফে মাদকবিরোধী প্রচারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া হয়েছে। নেশামুক্তিকেন্দ্রে পাঠানো, খেলাধুলো, নাচগানে উৎসাহ দেওয়া হয়। এমনকি, নির্দিষ্ট এলাকার মাদক কারবারিদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তারপরেও কী করে মাদকের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে, বুঝতে পারছেন না কেউই।