উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক : পাশাপাশি টলমল পায়ে হেটে চলেছে দু’জন মানুষ। কাঁধে ঝুলছে দুটি শিশু। মানুষ দুটি ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টি কোনমতে আটকে রেখেছে রাস্তায়। বুকের ভেতরটাও অস্বাভাবিক ফাঁকা। মাঝে মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠলে তাও শোনাচ্ছে অনেকটা গোঙানির মত। খালি পায়ে হেটেই চলেছে তাঁরা। রাস্তাও শেষ হয় না, বাড়িও আসে না। বাড়ি যদিও বুকের ভেতরটার মতই বড় ফাঁকা লাগবে আজকের পর থেকে, কারণ পাশাপাশি হেটে চলা মানুষ দুটি স্বামী-স্ত্রী। আর তাঁদের কাঁধে ঝুলছে নিজেদের প্রাণের প্রিয় দুই শিশু-সন্তানের প্রাণহীন দেহ। টাকার অভাবে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় না করতে পারায় সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে আসতে পারেননি দুই সন্তানকে। হেঁটে হেঁটে যখন নিয়ে এলেন তার কিছুক্ষণ পরই মৃত্যু হয় দুজনের।
ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলির। পরিবার জানিয়েছে, হঠাৎ জ্বর এসেছিল দু’জনেরই। হাসপাতাল ১৫ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু টাকা ছাড়া তো অ্যাম্বুলেন্স মিলবে না। অত টাকা কই? অগত্যা কাঁধে করেই দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে ছুটেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিধি বাম। হাসপাতালে পৌছলেও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। সময়মত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে দুই হতভাগ্য সন্তান। কিন্তু টাকা না থাকায় ছেলেদুটির মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্যও জোটেনি কোনও অ্যাম্বুলেন্স। তাই যেভাবে কাঁধে করে এনেছিলেন সেভাবেই সন্তানদের দেহ দুটি কাঁধে চাপিয়েই ফেরার পথ ধরলেন দম্পতি।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে নানা মহলে। প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের ভুমিকা। তবে এটিই কিন্ত প্রথম নয়। এই ঘটনা কিন্তু উস্কে দিচ্ছে, ২০১৬ সালে ওড়িশার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাঝির স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা। সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। তখনও কোনও অ্যাম্বুলেন্স জোটাতে না পেরে ৬৭ কিলোমিটার পথ মৃতদেহ বয়ে নিয়ে নিজের গ্রামে পৌঁছেছিলেন দানা মাঝি। ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে একই ঘটনা ঘটে এক ব্যক্তির সঙ্গে। কাঁধে করে নিজের সন্তানের দেহ নিয়ে হেটে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।