অরূপ দত্ত,কলকাতা : রাজ্যে দলের ধাঁচা ঠিকঠাক না থাকার জন্যই বিজেপির সদস্য সংগ্রহে ভাটার টান। রাজ্যের সদস্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে কেন্দ্রীয়স্তরের নেতাদের এটাই সর্বশেষ মূল্যায়ন। তবে কেন্দ্রীয় ওই পর্যবেক্ষকের মতে, সদস্য সংগ্রহে শেষপর্যন্ত লক্ষ্যপূরণ না হলেও মেরুকরণের কৌশলকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে ’২৬-এর বিধানসভায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোনও বাধা হবে না।
বঙ্গ বিজেপি এই মুহূর্তে কার্যত নেতৃত্বহীন। বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কার্যত বিদায়ি সভাপতি। ময়দানের রাজনীতিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অর্জুনের মতো বাংলাদেশকে হাতিয়ার করে মেরুকরণকেই পাখির চোখ করেছেন। সদস্যতা অভিযানে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একমাত্র দেখা যাচ্ছে দিলীপকেই। গত এক মাস ধরে দক্ষিণে কাকদ্বীপ থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ অভিযান করে চলেছেন তিনি। জঙ্গলমহলের মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামের মতো জেলায় সদস্য সংগ্রহের ঘাটতি মেটাতে তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে দল। সদস্য করার ব্যাপারে দল তাঁকে কোনও টার্গেট না দিলেও ইতিমধ্যেই প্রায় চারশো সক্রিয় সদস্য করে ফেলেছেন দিলীপ। যদিও মূলত জেলায় জেলায় গিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি আনাই তাঁর দায়িত্ব। সেই সূত্রেই দিলীপের অভিজ্ঞতা বলছে, ফল আশানুরূপ নয়। দলের ওপর থেকে নীচে কর্মীদের এই ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না। দলের সংগঠন নিয়ে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহে ঘাটতি রয়েছে বলেই তাঁর মনে হয়েছে। তার জন্য তিনিও মনে করেন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে দলের ধাঁচা না থাকাটাই মূল কারণ।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে পিছিয়ে থাকার অনেক কারণ। সাংসদ, বিধায়করা বলছেন একইসঙ্গে সংসদ ও বিধানসভা চালু থাকায় সদস্যতা অভিযানে সেভাবে সক্রিয় হওয়া যায়নি। কেউ কেউ আবার আরজি কর আন্দেলন থেকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। তবে দিলীপের মতে, ২৭ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। তখন বিধানসভা, সংসদের অধিবেশন কোথায়? আর রাজনৈতিক দলের সামনে এমন কত ইস্যু আসবে যাবে, তার জন্য সদস্য সংগ্রহ আটকাবে কেন? মুখে না বললেও, সদস্য সংগ্রহে পিছিয়ে পড়ার জন্য নেতারা যেসব কারণকে ঢাল করতে চেয়েছেন,তার সঙ্গে যে একমত নন তিনি, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন দিলীপ।
দিলীপের মনোভাবকে সমর্থন করে দলের এক কেন্দ্রীয় নেতাও বলেন, রাজ্যে দলের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত সব নেতা-কর্মীই তাকিয়ে আছেন আগামী দিনে রাজ্যে দলের দায়িত্ব কার ওপর বর্তায় সেই দিকে। তখন দলে তিনি আদৌ কোনও দায়িত্বে থাকবেন কি না তা যখন নিশ্চিত নয়, তখন অন্যের দায়িত্ব তিনি নেবেন কীভাবে? ফলে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এই অনীহাই রাজ্যে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মূল প্রতিবন্ধক। তবে এরই সঙ্গে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে হিন্দু ভোটকে সংহত করতে পারলে সংগঠনের দুর্বলতা কোনও বাধা হবে না।