তুফানগঞ্জ: কেনাকাটা করতে বক্সিরহাট থেকে তুফানগঞ্জ শহরে এসেছিলেন কনক সাহা। শপিং মল থেকে বের হতেই তাঁর ছয় বছরের ছেলের আবদার, পুজোমণ্ডপ দেখাতে হবে। আর উপায় কী! ব্যাগ হাতেই ঢঁু মারতে চলে এলেন আপ–টু–ডেট ক্লাবে। মণ্ডপ ঘুরিয়ে মেটালেন ছেলের আবদার। কাজের ফাঁকে এভাবেই বিভিন্ন মণ্ডপের থিম দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।
আর মাত্র একদিন। তারপরই শুরু হবে দেশজুড়ে আলোর উৎসব। প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই তুফানগঞ্জবাসীও। এবার শহরের বিগবাজেটের কালীপুজোর মধ্যে অন্যতম হল পুেরানো সরকারি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আপ–টু–ডেট ক্লাবের কালীপুজো। মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল থিমের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ৫৬তম বর্ষে দর্শনার্থীদের জন্য পুজোর থিম ‘পিঞ্জরে প্রাণ মুক্তির গান’। পুজো কমিটির সভাপতি চানমোহন সাহা বললেন, ‘এবার আমাদের বাজেট ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। আশা করছি অন্যবারের তুলনায় দর্শনার্থীদের বেশি সাড়া পড়বে।’
এদিকে, তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল সংলগ্ন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌরঙ্গি ইউনিটের পুজোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আদিম যুগের চিত্রকে। পুজো কমিটির সম্পাদক দেবাশিস বর্মার কথায়, ‘এবারে আমাদের পুজোর বাজেট চার লক্ষ টাকা। চৌরঙ্গি ইউনিটের থিমের প্রতি দর্শনার্থীদের আলাদা আকর্ষণ থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।’
অন্য সব পুজোমণ্ডপে থিমের চাকচিক্য থাকলেও রানিরহাট বাজার এলাকার সর্বমঙ্গলাদেবীর পুজোতে শহরবাসীর আলাদা আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। এই পুজোর নিয়মরীতিকে ঘিরে এলাকাবাসীর মনে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। ভোর ৪টায় অন্ধকার ঘরে পুরোহিতের চোখ বাঁধা অবস্থায় রায়ডাক নদীর জল, ডাবের জল ও দুধ দিয়ে দেবীকে স্নান করিয়ে নৈবেদ্য ও ফল আহার দেওয়া হবে। দুপুর ১২টায় লুচি মিষ্টান্ন দিয়ে ভোগ দেওয়ার পর ভক্তবৃন্দের দুয়ার খুলে দেওয়া হবে। ভূর্জপত্রে কালীযন্ত্র ঘটের ভিতরে দিয়ে পুজো শুরু হয়। প্রায় এক দশক ধরে নিষ্ঠা সহকারে পৌরোহিত্যের কাজ সামলাচ্ছেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর নিয়মরীতি নিয়ে পুরোহিত তিনি বলেন, ‘অমাবস্যার রাতে বৈদিক মতে মাকে ২২ পদের ভোগ সাজিয়ে দেওয়া হয়। তাতে থাকে শাক, অন্ন পুষ্পান্ন সহ নানান পদ। এরপর পুরোহিতের কাছে অলংকার তুলে দেওয়া হলে নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে দেবীকে তা পরানো হয়। পুজোর শেষে সেই অলংকার ফের কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
পুজো কমিটির সভাপতি জগবন্ধু সাহা বলেন, ‘মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে মাটির প্রতিমায় পুজো হত। বিগত ৬৭ বছর থেকে কষ্টিপাথরে মূর্তিতে পুজো হয়ে আসছে। শুক্রবার সকাল থেকে চলবে প্রসাদ বিতরণের পালা।’
কথিত আছে, একসময় শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরোনো বাসিন্দারা এই পুজোর প্রচলন করেন। ধীরে ধীরে স্থানীয় মানুষজনের প্রচেষ্টায় সাড়া মিলতে শুরু করে। পরবর্তীতে যাত্রাগানের মাধ্যমে টাকা তুলে বেনারস থেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি এনে পুজো শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা কমলকৃষ্ণ কুণ্ডুর কথায়, ‘এই পুজোকে ঘিরে ছোটবেলার বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। শুধু তুফানগঞ্জ শহরই নয়, নিম্ন অসম এলাকার বহু ভক্ত পুজোয় শামিল হন।’

