নাগরাকাটাঃ গত শনিবারই শেষ হয়েছে সব বাগানের বোনাস পর্ব। তাই পুজোর আগের শেষ রবিবারের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি থেকে বানারহাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ তল্লাটের হাট ব্যবসায়ীরা। তাঁদের হতাশ করেননি খদ্দেররা। এদিন আর ওয়ান ডে-র মেজাজে নয়। কার্যত টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ঢঙ এ বেঁচা কেনা সেরে বাড়ি ফেরেন ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকেই। দিনের শেষে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানাচ্ছেন প্রত্যেকেই। মালবাজার হাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কমল দত্ত বলছেন, “যা খবর সব হাটেই ব্যবসা মোটের ওপর ভালই হয়েছে। তবে পুজোর আগে আর একটি রবিবার হাতে পাওয়া গেলে আরও ভাল হত।”
ডুয়ার্সের হাট মূলত রবিবার কেন্দ্রিক। এই দিনটিতে ওদলাবাড়ি, মালবাজার, মেটেলি, মঙ্গলবাড়ি (আংশিক), চম্পাগুড়ি, লুকসান, বানারহাট, ধনতলার মতো এলাকায় হাট বসে। বিস্তীর্ণ তল্লাটের বাসিন্দারা সেখানে ভিড় জমান সারা সপ্তাহের বাজার করার জন্য। অন লাইন ট্রেডিং এর জমানায় অবশ্য জেনারেশন জেড এখন আর সেই অর্থে হাটমুখো নন। তবে এখনও বোতাম টেপা ছোট মোবাইলই ভরসা চা শ্রমিক পরিবারের বাড়ির অভিভাবকদের কেনাকাটির একমাত্র স্থান সেই হাট-ই। তাঁদের উপচে পড়া ভিড়েই এদিন সমস্ত হাট ছিল জমজমাট।
মিনগ্লাস চা বাগান থেকে মালবাজারের হাটে পুজোর বাজার সারতে এসেছিলেন সুনিতা ওরাওঁ নামে এক শ্রমিক। তাঁর কথায়, ‘বাড়ির সবার জন্যেই কিছু না কিছু কিনে নিয়ে গেলাম। পুজো বলে কথা।’ সেখানকার এক কাপড়ের ব্যবসায়ী স্বপন সরকার বলেন, ‘বিক্রি ভালই ছিল। এমন রবিবারের জন্যেই তো সারা বছরের অপেক্ষা।’ শনিবার নগদে বোনাস পেয়েছেন নাগেশ্বরী বাগানের ফুলমতি টোপ্পো। মেটেলি হাট থেকে পুজোর কেনাকাটি সারার ফাঁকেই তিনি বলেন, ‘সব জিনিসেরই দাম খুব বেড়ে গিয়েছে। এটাই বড় সমস্যা। বাজেট কাটছাট করেই বাজার সারতে হল।’ ওই হাটের লক্ষ্মী মাহাতো নামে এক রেডিমেড বস্ত্র বিক্রেতার কথায়, ‘ক্রেতাদের চাহিদার ধরণ দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে। আধুনিক স্টাইলের জামা কাপড়ই তাঁদের প্রথম পছন্দ। সেরকমই মাল এনেছিলাম।’
বানারহাট হাটে তো তিলধারণের জায়গাও ছিল না। আশপাশের ২৪ টি চা বাগানের শ্রমিকরা এসেছিলেন কেনাকাটি সারতে। সেখানে এন্ড্রুউ ইউলের যে ৪ চা বাগানের বোনাস সমস্যা ছিল সেখানকার শ্রমিকরাও টাকা পেয়ে গিয়েছেন। ওই কোম্পানীরই কারবালা চা বাগানের শোভা ওরাওঁ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রথম কিস্তিতে ১১ শতাংশের বোনাস পেয়েছি। কিছু টাকা হাতে রেখে বাকিটা কেনাকাটিতে খরচ করে দিয়েছি।’
লুকসান হাটে শঙ্কর সাহা নামে এক জুতোর দোকানী বলছেন, ‘সকাল থেকেই আনলিমিটেড খদ্দের এসেছে। ভালো বিক্রি করে বাড়ি ফিরছি।’ এক গাল হাসি মুখে জিভ কেটে তাঁর সংযোজন, ‘টাকার অংক আর নাই বা বললাম।’ চম্পাগুড়ির হাট চা বাগান ঘেরা। লাগোয়া ৭ টি বাগানের শ্রমিকরা সেখানে এসে শেষ মুহুর্তের বাজার করে যান। জামা কাপড়, জুতো, মণিহারি সামগ্রী ছাড়াও দশেরা পুজোর সামগ্রীও কিনতে দেখা যায় তাঁদের। ওদলাবাড়িতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও হাট চলতেই থাকে। সেখানকার হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রজাপতি প্রসাদ বলেন, মানাবাড়ি, বাগ্রাকোটের মত লাগোয়া চা বাগানগুলিতেও শনিবার বোনাস হয়ে যাওয়ায় এদিন দারুণ ব্যবসা হয়েছে।