ফালাকাটা: ব্রাউন সুগার সহ মাঝেমধ্যেই পুলিশের জালে ধরা পড়ছে অনেকে। তার মধ্যে যেমন বিক্রেতা আছে, তেমনই আবার ক্রেতা। কিন্তু এই ‘নেশা’র যা দাম, তা এই অল্পবয়সি ক্রেতারা সহজে জোগাড় করতে পারে না। তাই বেছে নিতে হচ্ছে চুরির পথ। এদের মধ্যে ফালাকাটা শহরের ‘আর্লি ইয়াং গ্রুপ’-এর সদস্যরাই এই কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এদের বয়স মূলত ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। ছোটখাটো চুরি করে নেশার জন্য টাকা জোগাড় করছে নিত্যদিন। শহরের ৫, ৬ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এই সংখ্যাটা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। চিন্তিত পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ।
ফালাকাটা থানার আইসি অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসপি স্যরের নির্দেশে নেশার বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলি। ধারাবাহিক মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে সাফল্যও মিলছে। এমনকি নেশাদ্রব্যের বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার সচেতনতা প্রচার করছি। এই কাজে অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
ফালাকাটা শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় ব্রাউন সুগার এখন সহজলভ্য। জানা গিয়েছে, ফালাকাটা পুরসভার ৫, ৬, ১২ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিভিন্ন জায়গায় এই ব্রাউন সুগার পাওয়া যায়। এইসব এলাকায় এজেন্টরাই চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঠিকানায় ব্রাউন সুগার পৌঁছে দেয়। অনেক সময়ে ফোন করলে পেডলার এসে দিয়ে যায়। এক গ্রাম ব্রাউন সুগারের দাম পড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এক গ্রামকে দশটি পুরিয়া করে ৬০০–৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এইসব নেশার দ্রব্যই যাদের গড় বয়স ১৬–২৪ বছর তারা কিনছে। এরা আবার বেশিরভাগ কেউ স্কুল তো কেউ কলেজ পড়ুয়া। আবার অনেকেই স্কুলছুট।
বিশেষ করে বাগানবাড়ি, যুব সংঘ, বটতলা প্রভৃতি এলাকায় মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো চুরি হচ্ছে। স্থানীয়রা চোরদের ধরেও ফেলছেন। তখনই ব্রাউন সুগার ও চুরির যোগের বিষয়টি সামনে আসছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কারও বাড়ির লোহার রড, কারও কল তো কারও টোটোর ব্যাটারি চুরি হচ্ছে। যারা চুরি করছে ধরা পড়ার পর নাকি তারা স্বীকারও করছে। এমনকি নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়েই যে তারা এই পথ বেছে নিয়েছে তা খোদ ছিঁচকে চোররাই জানিয়েছে।
বাগানবাড়ির বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাসের কথায়, ‘বাড়ি তৈরির জন্য রড এনে রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন বেশ কিছু রড চুরি হয়ে যায়। পরে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এলাকার এক তরুণ। পরে অবশ্য সে স্বীকার করে যে, নেশার টাকা জোগাড় করতেই এমনটা করেছিল।’ ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিনয়কুমার গোপের কথায়, ‘এই এলাকায় ব্রাউন সুগারের নেশা করার জন্য একটি গ্রুপ কাজ করে। তারাই এলাকায় ছোটখাটো চুরি করে। আবার এলাকার অন্য তরুণদেরও দলে ঢোকায়। ইতিমধ্যেই পুলিশকে সব জানিয়েছি।’
ফালাকাটা শহরের সমাজকর্মী শুভজিৎ সাহার কথায়, ‘গত কয়েক বছরে ফালাকাটায় ব্রাউন সুগারের বেশ রমরমা হয়েছে। ফলে বাড়ছে আসক্তের সংখ্যাও। বহুবার পুলিশ পদক্ষেপ করছে। কিন্তু নেশাগ্রস্তরা নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। পুলিশ এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে আরও কড়া হতে হবে।’