শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: ‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।’ কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হলেন কবিতাটির স্রষ্টা ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। যার রেশ এখনও কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার অবক্ষয় ও ইংরেজিমাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত দেখে মনে ভীষণ কষ্ট পান বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নলিনাক্ষ পাল (৮৬)। যে ভাষা আন্দোলনের জন্য বাঙালির রক্ত ঝরেছিল, সেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের (Bhasha Dibas) প্রাক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ছোটবেলার সেই আন্দোলনের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন তিনি।
কোচবিহার (Coochbehar) শহরের গুঞ্জবাড়ির বাসিন্দা নলিনাক্ষবাবুর আদি বাড়ি ছিল ঢাকায়। সেখানে ছাত্রাবস্থায় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
জোর করে উর্দু চাপিয়ে দেওয়া নয়, বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে -এই দাবিতে ঢাকার রাজপথ যখন বাঙালির আন্দোলনে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন ঢাকার রায়েরবাজার হাইস্কুলে পড়াশোনা করতেন নলিনাক্ষ। ১৯৫২ সালে আন্দোলন যখন চরমে, তখন তিনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তখন বিদ্যালয়ে উর্দু পড়তে হত। গুঞ্জবাড়ির বাড়িতে বসে নলিনাক্ষ বললেন, ‘চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত উর্দু ভাষা নিয়ে কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু যখন পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলাম তখন উর্দু পড়া বাধ্যতামূলক করা হল। আর বাংলাকে উঠিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলতে থাকে। বাংলা ভাষার সপক্ষে আমরা কবিতা, গান লিখতাম। প্রতিদিন নিয়ম করে মিছিল হত। আমরা সেই মিছিলে যেতাম।’
নলিনাক্ষর সংযোজন, ‘ভাষাকে কতটা ভালোবাসলে তার জন্য মানুষ রক্ত ঝরাতেও প্রস্তুত থাকে তার প্রমাণ সামনে থেকে দেখেছি। এখন বাংলা ভাষার অবক্ষয় দেখলে খুব কষ্ট হয়। চারদিকে ইংরেজি, হিন্দি ভাষার বাড়বাড়ন্ত। ইংরেজিমাধ্যমের স্কুলে পড়ার প্রবণতা বেশি। এমনকি আমার তিন নাতি-নাতনির মধ্যে দুজনই ইংরেজিমাধ্যমে পড়াশোনা করে। তবে ওরা বাড়িতে বাংলাও শেখে।’
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যেদিন পুলিশের গুলিতে পাঁচজন প্রাণ হারান সেদিনের আন্দোলন প্রসঙ্গে নলিনাক্ষ বলছেন, ‘সেদিন আমরা তাড়াতাড়ি বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মিছিল করে মূল মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই শুনতে পেলাম সেখানে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।’ ছোটবেলার স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে বারবারই নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলেন তিনি।
একেবারে ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন। ঢাকার রায়েরবাজারে মা, দাদা, বৌদির সঙ্গেই থাকতেন নলিনাক্ষ। ১৯৬৪ সালে কোচবিহারের গুঞ্জবাড়ি এলাকায় বসবাস শুরু। সোনা, রুপোর অলংকার তৈরির পেশা তাঁর। ৮৬ বছর বয়সে এখনও তাঁকে অলংকারের প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়।
মাতৃভাষা দিবস এলে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে সংবর্ধনা জানানো হয় নলিনাক্ষকে। তবে সংবর্ধনা নয়, তার বদলে বাংলা ভাষার চর্চা চলুক বেশি করে, শুধু সেটাই চান তিনি।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ইয়ামি গৌতম (Yami Gautam) ও তাঁর স্বামী আদিত্য ধরের (Aditya Dhar)…
গঙ্গারামপুর: জৈষ্ঠ্যের প্রথম সোমবার ঐতিহ্যবাহী বিন্দ্যেশ্বরী কালীপুজো (Vindhyeshwari Kali Puja) অনুষ্ঠিত হল গঙ্গারামপুরের (Gangarampur) দহপাড়ায়।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সোমবার বিষ্ণুপুরের ওন্দায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের (TMC Candidate Sujata…
(যুগ বদলায়। বদলায় প্রেমের ধরনও। আজকাল কৈশোরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমে মজে নতুন প্রজন্ম। ধোঁকা, বিচ্ছেদ…
জলপাইগুড়ি: গতবছর সিকিম বিপর্যয়ের পর তিস্তা অববাহিকায় তৈরি হয়েছে একাধিক চ্যানেল। বহু জায়গায় পড়েছে বালির…
This website uses cookies.