সানি সরকার, শিলিগুড়ি : ঘোষণা হয়েছিল ’২৩-এর মে মাসে। অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেল ’২৫-এর শুরুতে। সেবক সেনাছাউনি থেকে সেবক বাজার পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য নীতিন গড়করির মন্ত্রক বরাদ্দ করল ১,৪০০ কোটি টাকা। ফলে বালাসন সেতু থেকে এলিভেটেড হাইওয়ের যে কাজ চলছে, তা সম্প্রসারিত হচ্ছে সেবক বাজার পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের একাধিক রাস্তা সহ সিকিমের লাইফলাইন নিয়েও নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে সড়ক পরিবহণমন্ত্রক।
বাগ্রাকোটের মতো ১০ নম্বর জাতীয় সড়ককেও নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। যে কারণে রাস্তাটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডকে। এলিভেটেড হাইওয়ের নতুন অংশের অর্থ বরাদ্দের নথি প্রকাশ্যে এনে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট বলছেন, ‘সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটছে। পরিকল্পনামাফিক বেশ কিছু রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। ফলে পাহাড়, সমতল দুই অংশের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরালো হবে। প্রসার ঘটবে পর্যটনে।’ শিলিগুড়ি শহরকে কেন্দ্র করে রিং রোড তৈরির আশ্বাসও নতুন করে দিয়েছেন সাংসদ।
সিকিমগামী বিকল্প পথ আশা জাগিয়েছে উত্তরে। বাগ্রাকোট থেকে চুইখিম হয়ে নতুন রাস্তা ও লুপ পুল দেখতে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদেরও। পুরোদমে রাস্তাটি চালু হয়ে গেলে বাংলা-সিকিম যোগাযোগে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। সেইসঙ্গে সেবক সেনাছাউনি থেকে সেবক বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড করিডর সম্প্রসারিত হলে খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে কালিম্পং ও সিকিমে। বর্ষার সময় ধসে রাস্তা অবরুদ্ধ হলেও আর ভোগান্তি থাকবে না পর্যটক ও সাধারণের।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রক সূত্রে খবর, কিছুদিনের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে নতুন রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। এই কাজ শেষ হবে তিন বছরের মধ্যে। অর্থাৎ ২০২৮ সালেই সেবক বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটতে পারবে।
অদূরভবিষ্যতে সেবক বাজার থেকে দ্বিতীয় করোনেশন সেতু মাথা তুলবে। যে কারণেই রাস্তাটিকে সেবক বাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নতুন ১৪ কিলোমিটার রাস্তায় উড়ালপুল তৈরি হবে সেবক রেলগেট সহ আরও দুটি জায়গায়। পাশাপাশি, সিকিমের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়েও নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে গড়করির মন্ত্রক।
গত কয়েক বছরে বর্ষায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। একের পর এক ধসের জেরে চলতি বছরও বর্ষার সময় প্রায়দিন বন্ধ ছিল রাস্তাটি। ১০ নম্বর সড়ককে বাঁচাতে ধসপ্রবণ এলাকায় উড়ালপুল তৈরির পরামর্শ দিয়েছে জাপানের একটি সড়ক বিশেষজ্ঞ সংস্থা। ওই প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে এনএইচআইডিসিএল। এক বছরের মধ্যে ওই কাজ শুরু হয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশী রাজু।
তাঁর বক্তব্য, ‘বালাসন হয়ে শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং এবং দাওয়াইপানি-তিস্তা-দার্জিলিংয়ের মধ্যে দুটি জাতীয় সড়ক তৈরির যে প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন, তা নিয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। লোধামা, বিজনবাড়ি সহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা তৈরির ব্যাপারেও সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে মন্ত্রক।’
এদিনই মালদা-রতুয়া-ফুলহর সেকশনে ৫০ কিলোমিটার দুই লেনের রাস্তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। ফলে ওই পথেও ভোগান্তি কমবে অচিরে। আপাতত সেই আশাতেই রয়েছে উত্তরবঙ্গ।