শিলিগুড়ি: ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ভারতনগরের বটুকেশ্বর দত্ত সরণির একটি স্ট্যান্ড থেকে জারে জল ভরছিলেন এক যুবক। পাশে থাকা টোটোয় রাখা জলভর্তি আরও দুটো জার। যা দেখতে পেয়ে পথচলতি একজন বললেন, ‘এ কী করছ! জানো না এই জল পান করা মানা।’ উত্তর পেলেন, ‘আপনি জানেন দোকান চালাতে কত জল লাগে?’ কীসের দোকান উত্তরে অবশ্য স্পষ্ট হল না।
দাদাভাই মাঠকে পাশ কাটিয়ে যে রাস্তাটি এনজেপির পথ ধরেছে, সেখানে একটি ফুচকার ঠ্যালা ভ্যান দাঁড়িয়ে। ভ্যানের নীচে পাটাতন করা। সেখানে রাখা জলভর্তি জার। ‘জল কিনেছেন নাকি?’ উত্তর এল, ‘টাকার অত জোর নেই।’ পরবর্তীতে রমেশ রজকের সতর্ক উত্তর, ‘কাউকে খেতে দিচ্ছি না। শুধু বাটি, হাঁড়ি পরিষ্কার করি।’ কিন্তু ওই একটি জারের বাইরে জল রাখার আর কোনও ব্যবস্থা নজরে এল না।
জলপানে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও যে সাধারণের হুঁশ ফেরেনি, এমন ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। তাই বুধবার বিকেলের পর বৃহস্পতিবারও রাস্তার ধারের স্ট্যান্ডপোস্টগুলির ছবিটা তেমন বদলায়নি। সাধারণ বাসিন্দারা হয়তো বাধ্য হয়ে কেনা জল খাচ্ছেন। কিন্তু শহরের হোটেল থেকে ফাস্ট ফুড, চায়ের দোকান থেকে রেস্তোরাঁ, পুরনিগমের সরবরাহ করা জল ব্যবহার হচ্ছে দেদারে। অজান্তে তা পান করছেন প্রচুর মানুষ, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের বড় অংশ। জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডাঃ কল্যাণ খান বলছেন, ‘দূষণ বেড়ে যাওয়ায় যখন এই জল পান করতে মানা করা হয়েছে, তখন তা থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত। অন্যথায় কিন্তু জেনে-বুঝে নীলকণ্ঠ ধারণ করা হবে। এসময় সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
এখানে প্রশ্ন উঠছে পুরনিগমের ভূমিকা নিয়ে। মেয়র যেখানে জল পান না করার কথা বলছেন, তখন কেন জল সরবরাহ অব্যাহত রাখা হচ্ছে?
এমন প্রশ্ন তুলেই টিকিয়াপাড়ার চায়ের দোকানদার স্বপন সরকার বললেন, ‘পুরনিগম জল বন্ধ রাখলে আমরা নিতে পারতাম না। জলের জার কিনতে হত। তার জন্য খদ্দেরের থেকে টাকা একটু বেশি নিতাম। কিন্তু বিনে পয়সায় যখন জল পাওয়া যাচ্ছে, তখন কে আর বেশি খরচ করবে?’
এনজেপির সামনে থাকা হোটেলগুলিও পুরনিগমের জল ব্যবহার করে। যা স্বীকার করে এক হোটেল মালিক বললেন, ‘এত জল লাগে, কেনা জলে হোটেল চালানো সম্ভব নয়। তবে জলের বোতল আছে। অধিকাংশ গ্রাহক কেনা জল খান।’ তিনি যখন একথা বলছেন, তখন টেবলে রাখা মগ থেকে জল পান করতে দেখা গেল দুজনকে। অর্থাৎ তাঁরা পুরনিগমের জল পান করছেন। এক হোটেলকর্মী জানালেন, প্রায় প্রতিটি হোটেলেই চাপাকল রয়েছে। কিন্তু খাবার জল আনা হয় ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা স্ট্যান্ডপোস্ট থেকে। তার জন্য বাঁধাধরা লোক আছেন।
শুধু এনজেপি নয়, চম্পাসারি, ফুলেশ্বরী এবং পাড়ায় পাড়ায় যে হোটেলগুলি রয়েছে, সর্বত্রই ব্যবহার হচ্ছে পুরনিগমের জল। এর জন্য অবশ্য জল সরাবরাহ অব্যাহত রেখে কাঠগড়ায় পুরনিগমই।