সিতাই: উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে মেলার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। আর তেমনি একটি মেলা হল কোচবিহারের সিতাই ব্লকের জাটিগাড়া এলাকার প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন কেন্দাল ধোনির লক্ষ্মীর মেলা। প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজোর পরদিন অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। একদিনের এই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রায় দুই শতাব্দী আগে কেন্দাল ধোনি নামে এক ব্যক্তি স্বপ্নে লক্ষ্মী দেবীর দর্শন পান। দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন পুজো ও মেলার আয়োজন করতে। সেই থেকেই শুরু হয় এই ঐতিহ্যবাহী পুজো ও মেলা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে সেই রীতি আজও বজায় রেখেছেন কেন্দালের বংশধররা।
লক্ষ্মীপুজোর দিন কেন্দালের বংশধররা বংশপরম্পরায় নিয়মনিষ্ঠা সহকারে লক্ষ্মী দেবীর পুজো করেন। পুজোয় বিভিন্ন ধরনের নাড়ু, পায়েস ও নানা ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে। ভক্তদের উপস্থিতিতে পুজোর পরিবেশ হয়ে ওঠে ভক্তিময়। কেন্দালের বংশধর গুণধর রায় বললেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো ও মেলা। আমরা শুধু সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছি। যতদিন গ্রামের মানুষ চান, ততদিন এই মেলা চলবে।’
লক্ষ্মীপুজোর পরের দিনই অনুষ্ঠিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। সকাল থেকেই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম যেমন জাটিগাড়া, বারবাংলা, ঢেকিয়াজান সহ দূরদূরান্তের মানুষ এসে ভিড় জমান এই ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে। মেলায় প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০টি দোকান বসে। খেলনা, মিষ্টি, হস্তশিল্প, মাটির বাসন, পোশাক থেকে শুরু করে নানা দোকানে উপচে পড়ে ভিড়।
রাতে মেলা জমে যাত্রাপালায়। স্থানীয় ও বাইরের যাত্রাদল এই মঞ্চে অভিনয় করে। যাত্রা দেখতে গ্রামের মানুষের ভিড় উপচে পড়ে, যেন গোটা গ্রাম এক হয়ে যায় আনন্দে ও সংস্কৃতির আবহে। মেলা পরিচালন কমিটির সদস্য হেমেন্দ্রকুমার রায়ের কথায়, ‘জাটিগাড়া, বারবাংলা ও ঢেকিয়াজান গ্রামের মানুষ মিলে এখন মেলার দায়িত্ব পালন করি। তবে কেন্দাল ধোনির পরিবারই মেলার মূল দায়ভার বহন করে। গ্রামের সকলের অংশগ্রহণেই এই মেলা সফল হয়।’ স্থানীয় ব্যবসায়ী বাপি সাহা বলছেন, ‘এই একদিনের মেলায় বছরের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।’
এদিন মেলা দেখতে এসেছিলেন স্থানীয় প্রিয়াংকা দত্ত। ছোটবেলা থেকেই এই মেলায় আসেন তিনি। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন। অশোক রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সরকারি তহবিল ছাড়াই গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই মেলার সমস্ত আয়োজন করা হয়।

