বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: চলতি মাসে জাল নোট (Fake Note) পাচারের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার (Arrest) করে এসটিএফ (STF)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই জাল নোট আসছে পাকিস্তান থেকে। সেখান থেকেই ছোট, ছোট ভাগ করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায়। সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অগাস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে মজুত করা হয়েছে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার জাল নোট। কমপক্ষে ১৬টি বড় স্ট্যাক ইয়ার্ড বানানো হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বিএসএফের তরফে।
কাঁটাতার টপকে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা যাতে দেশে ঢুকতে না পারে তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আধিকারিকদের তরফ থেকে। পাশাপাশি জাল নোটের পাচার রুখতে বিএসএফের গোয়েন্দাদের সাদা পোশাকে মোতায়েন করা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। দুই দেশের পাচারকারীদের মধ্যে যে সমস্ত নাম বিএসএফের কাছে নথিভুক্ত রয়েছে ও একাধিক মোবাইল ফোন নম্বর রয়েছে তার উপরেও নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফের গোয়েন্দা দপ্তর। কি কথা হচ্ছে? তাদের লোকেশন কোথায়? সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখছেন বিএসএফের গোয়েন্দা দপ্তরের কর্তারা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে রাজশাহি, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জেলার বেশ কিছু জায়গায় জাল নোট মজুত রাখা হয়েছে। যে কোনও সময় সেখান থেকে কাঁটাতারের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশের দুষ্কৃতী ও জঙ্গিরা। মহম্মদ ইউনূসের জমানায় ‘নতুন’ বাংলাদেশে ফের পুরোদমে মদত দিচ্ছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তান থেকে আসা পণ্যের ‘ফিজিকাল ভেরিফিকেশন’ হাসিনার আমলে ছিল বাধ্যতামূলক। সেসব এখন বন্ধ রয়েছে মহম্মদ ইউনূসের নির্দেশে। এই রাজ্যের মালদহ সংলগ্ন চাঁপাই নবাবগঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন রাজশাহির বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে সেগুলি। সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম এবং বিমানপথে ঢাকা হয়ে পাকিস্তান থেকে আনা হচ্ছে ভারতীয় জাল নোট। সেগুলি মজুতের জন্য নতুন করে ২০টি ট্রানজিট ক্যাম্প চালু করেছে আইএসআই।
গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারত বিরোধী এই চক্রান্তে পাক গুপ্তচর সংস্থার ‘অফিস’ ইউনিটের দোসর হয়েছে বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’এর ‘ব্যুরো এক্স’। বিভিন্ন সূত্র থেকে এপারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, সীমান্তের ওপারে যে জাল নোট মজুত হয়েছে, সেগুলির সিংহভাগই ২০০ টাকার। রয়েছে ৫০০ টাকার নোটও, যা ছাপা হয়েছে দাউদের ভাই আনিস ইব্রাহিমের ‘মেহেরান পেপার মিলে’। পাকিস্তানের সিন্ধে কোটরি এলাকার ওই পেপার মিলটি আইএসআই-এর ‘অফিস’ ডেস্কের নিয়ন্ত্রণাধীন পাকিস্তান সিকিওরিটি প্রিন্টিং কন্ট্রোলের অধীন।
এপারের গোয়েন্দাদের দাবি, গত সেপ্টেম্বর থেকে একের পর এক ভারতীয় জাল নোটের কনসাইনমেন্ট পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কনসাইনমেন্টটি এসেছে চট্টগ্রামে। সেটাও গত নভেম্বর মাসে করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজে চেপে। দুবাই থেকে ঢাকার কিছু উড়ানে পাকিস্তানের ‘ডিপ্লোম্যাটিক ট্যাগ’ লাগানো ট্রলি ব্যাগ ও স্যুটকেসে ভরে আনা হয়েছে এদেশের জাল নোট।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, হাসিনার সময়ে বারবার অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল ঢাকার আইএসআই’এর ‘ট্রানজিট ক্যাম্পগুলি। যাত্রাবাড়ি, কদমতলি, বাদামতলির ওই ঘাঁটিগুলি ফের সক্রিয়। সেখান থেকেই ট্রাক, লরিতে চাপিয়ে জাল নোট নিয়ে গিয়ে মজুত করা হয়েছে মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর লাগোয়া নানা স্ট্যাক ইয়ার্ডে।