ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: সময়টা তখন সত্তরের দশক। ফালাকাটায় সেভাবে বসতি তৈরি হয়নি। তখনও চারদিকে বড় বড় গাছ, প্রশস্ত রাস্তা। তবে শিক্ষার আলো তার অনেক আগে থেকেই পৌঁছে গিয়েছিল। এই শিক্ষা বিস্তারে অবদান তৎকালীন শিক্ষকদের। তাঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এলেন ফালাকাটায়। এঁদের একটা বড় অংশই বসতি স্থাপন করলেন মাদারি রোড এলাকায়। মাদারি রোড দুর্গা মন্দিরের আশপাশে অনেক শিক্ষক বাড়ি তৈরি করলেন। এলাকায় শিক্ষকরাই থাকতেন বেশি। তাই নামকরণ করা হল মাস্টারপাড়া। এখনও এই নামেই এলাকা পরিচিত। তবে এলাকায় এখন মাস্টাররাই যেন সংখ্যালঘু। বিভিন্ন পেশার মানুষ এখন বাস করেন ফালাকাটা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টারপাড়ায়।
ফালাকাটা হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তথা মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা বীরেন মিত্রের কথায়, ‘১৯৭৪ সাল নাগাদ ফালাকাটার মাদারি রোড এলাকায় বাড়ি তৈরি করি। আমাদের গলিতে তখন যে কয়টা বাড়ি ছিল, সেখানে শিক্ষকরাই থাকতেন। তাই মাস্টারপাড়াই বলা হত। এখন অবশ্য অন্য পেশার মানুষও থাকেন এখানে।’
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকের একটি সংলাপ হল– ‘হোয়াটস ইন আ নেম।’ বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘নামে কী আসে যায়।’ তবে নামে কিছু যে আসে যায় তার প্রমাণ ফালাকাটার এই মাস্টারপাড়া। নামের সঙ্গেই এলাকার যে পরিচিতি আছে তা সহজেই বোঝা যায়। বিশেষ করে মাস্টারপাড়া নাম শুনলেই মনে হয় শিক্ষিত, ভদ্র, রুচিসম্মত শিক্ষকদের বসবাস। আর ফালাকাটার মাস্টারপাড়ার পরিবেশ ঠিক এমনটাই।
মাদারি রোডের দুর্গা মন্দির সংলগ্ন গলি এবং বিডিও অফিস চত্বর এলাকার বাসিন্দারাও নিজেদের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। তবে মূল মাস্টারপাড়ার গলিতে এখন শুধু শিক্ষকরা থাকেন না। ভিন্ন পেশার মানুষও থাকেন। অনেকে আবার পূর্বপুরুষের শিক্ষকতার পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। আবার অনেকে চাকরি না পেয়ে অন্য পেশার সঙ্গেও যুক্ত।
এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর সাহা বিমা কোম্পানির এজেন্ট। তিনি বলেন, ‘এখনও অনেক শিক্ষক আছেন। অনেকে আবার অবসর নিয়েছেন। তবে আমরা মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা বলে এখনও গর্ব করি।’ তরুণ তন্ময় সাহা বলেন, ‘কেউ শিক্ষক, কেউ স্বাস্থ্যকর্মী, কেউ আবার ব্যবসায়ী। তবে আমরা সকলেই মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা। সকলে দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে মিলেমিশে রয়েছি, ভবিষ্যতেও এভাবে থাকতে চাই।’
শিক্ষক দিবসে মাস্টারপাড়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী আসবে। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাবে। ফালাকাটার অন্য পাড়াগুলোয় এই ছবি তেমন দেখা যায় না। শিক্ষক দিবসে মাস্টারপাড়ার গুরুত্ব আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।