কালচিনি: বাসরা, পানা ও কালিঝোরা নদী তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে কালচিনির সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানটিকে। ওই নদীগুলোতে জল বাড়তে থাকায় যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। প্রতি রবিবার ওই বাগানের হাটখোলায় হাট বসে। ওই হাটে বাগানের শ্রমিকরা ভিড় জমান প্রতি সপ্তাহে। কিন্তু চলতি সপ্তাহের পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম। প্রায় বন্ধই থাকে হাট। জল এতটাই বেড়ে যায় ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।
শুধু হাট নয়, বেশ কিছুদিন ধরে বাগানের দোকানগুলোতেও ঠিকঠাক খাদ্যসামগ্রী আনতে পারছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিছু বিক্রেতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করছেন। আবার কিছু বিক্রেতাকে নদী পারাপারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।
বাগানের এক কর্মী সিবি থাপা বলেন, ‘তিনটি নদী বাগানের শ্রমিক ও বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বঁাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে। ঘরে আনাজ না থাকলে আমরা খাব কী?’ বাগানের কর্মী আকাশ লামার বক্তব্য, ‘কালচিনি বাজার বা হ্যামিল্টনগঞ্জের সাপ্তাহিক হাটের দূরত্ব বাগান থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার। বহু বছর ধরে তাই বাগানে রবিবার ছুটির দিন হাট বসে। আমরা ওই হাট থেকেই আনাজ কিনে রাখি। তাতে পুরো সপ্তাহ চলে যায়। কিন্তু জল বেড়ে যাওয়ায় হাটে বিক্রেতারা আসতে পারছেন না।’ খাদ্যসংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এখন।
এছাড়া বাগানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ফ্যাক্টরিতে তৈরি হওয়া চা পাতা দীর্ঘদিন বাগানের বাইরে পাঠাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বাগান থেকে বের হওয়ার সময় প্রথমেই পড়ে কালিঝোরা। এর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে পানা নদী। ওই দুটি নদী পার করে কোনওরকমে উৎপাদিত চা পাতা বাগানের বাইরে পাঠাচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ।
বাগানের ম্যানেজার শান্তনু বসু বলেন, ‘ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে ইতিমধ্যে তিন নদীর তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতি সহ অন্য সমস্যার বিষয়ে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সেচ দপ্তরকে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছে। তিন নদীর ভয়াবহ রূপে সকলেই আতঙ্কে।’ বাগানের শ্রমিক রাম ওরাওঁ বলেন, ‘নদীর যা জলস্রোত, খুব বিপদে না পড়লে আমরা কালচিনিতে যাচ্ছি না এখন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ওদের নদী পারাপার করাতে মন চায় না।’