সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি : প্রাথমিকে ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ বা শীর্ষ আদালত এই রায়ে স্থগিতাদেশ বা বাতিলের নির্দেশ না দিলে এই রায় কার্যকর করার দায়িত্ব পড়বে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ওপর। আর বাস্তবে তা করতে হলে কী হবে, তা নিয়ে আপতত খেই খুঁজে পাচ্ছেন না দপ্তরের কর্মী ও আধিকারিকরা।
জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষেত্রে আঠারোটি শিক্ষা সার্কেলের বেশিরভাগেই বেতন বিল তৈরির মতো কর্মী নেই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদেও কর্মীর অভাব। এই অবস্থায় রায় কার্যকর করতে হলে পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে বলে মনে করছেন কর্মীরা। অন্য জেলাগুলির ছবিও প্রায় একই।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালের বক্তব্য, আদালতের রায় কার্যকর করতে হলে বেতন প্রক্রিয়া সহ নানা ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অসম্ভব। আমরা রায়ের কপি পেয়েছি। রায়দানকারী বিচারপতি সহ উচ্চ আদালতকে আমাদের সমস্যা বিস্তারিত জানাব। কর্মরত আড়াই লক্ষ শিক্ষকের পাশাপাশি প্রতিটি যোগ্য প্রার্থীর প্রতি কোনও অবিচার পর্ষদ হতে দেবে না। তাঁর দাবি, নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতার প্রশ্নে আমি একচুলও সমঝোতা করব না।
পর্ষদ সূত্রে খবর, বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষকদের বেতন হয় অনলাইন স্যালারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা ওএসএমএস পোর্টালের মাধ্যমে। প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রতিটি সার্কেল অফিস থেকে শিক্ষকদের বেতন চূড়ান্ত করে জেলা স্তরে পাঠান সাব-ইনস্পেকটররা। জেলা স্তরে সমস্ত বেতন বিল জমা হওয়ার পর মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে অনলাইনে তা জমা করা হয় নির্দিষ্ট ট্রেজারিতে। মাসের শেষ কর্মদিবসে ট্রেজারি সরাসরি সেই বেতন অনলাইন ট্রান্সফার সিস্টেমে পাঠিয়ে দেয় শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে।
ওএসএমএস পোর্টালে বেতন নির্ধারণের জন্যে বেসিক পের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে ডিএ, ঘরভাড়া, মেডিকেল অ্যালাউয়েন্স মিলিয়ে যা মোট বেতন দাঁড়ায়, তার থেকে পিএফ, গ্রুপ ইনসুরেন্স এবং কর বাদ দেওয়ার পর বেতন পাঠানো হয় অ্যাকাউন্টে। হাইকোর্টের রায়ে ৩৬ হাজার শিক্ষককে চার মাস প্যারাটিচারদের সমান বেতন দিতে হলে অবিলম্বে ওএসএমএস পোর্টাল ঢেলে সাজাতে হবে। যা সহজ কাজ নয়।
অন্যদিকে প্যারাটিচাররা সর্বশিক্ষা মিশনের কর্মী হিসেবে মিশন মারফত বেতন পান। তাঁদের বেতনে কোনও ভাগ নেই। যে শিক্ষকদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে তাঁরা সব মিলিয়ে বেতন পান ৩৭ হাজার টাকার মতো। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সূত্র অনুযায়ী, অনেক শিক্ষকই প্রভিডেন্ট ফান্ডে দশ হাজার বা তার বেশি টাকা জমা করেন। আদালতের রায় মেনে তাঁদের বেতন প্যারাটিচারদের সমান অর্থাত্ ১০ হাজার ৮০০ টাকা করা হলে পিএফ ও করের কী হবে তা নিয়ে চরম ধোঁয়াশায় কর্মী ও আধিকারিকরা।
আবার যে শিক্ষকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তাঁদের ঋণের কিস্তি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কেটে নেওয়া হয়। বেতন কমে গেলে, সেই টাকা থেকে কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া সম্ভব না হলে, শিক্ষকরা ঋণখেলাপির আওতায় পড়তে পারেন, যা আরেক সমস্যার সৃষ্টি করবে।
জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান লক্ষমোহন রায় বলেন, আদালতের রায়ের কথা শুনেছি, তবে পর্ষদের তরফে আমাদের কোনও নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও কাজ করতে পারি না। নির্দেশ এলে তা বাস্তবায়ন করতেই হবে।