কৌশিক দাস, ক্রান্তি: ক্রান্তি ব্লকের ক্রান্তি-গজলডোবা রাস্তার (Gajoldoba) মাঝে থাকা কাঠামবাড়ি ক্যানাল মোড় দেশি মাছ প্রেমীদের কাছে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মিষ্টিজলের সুস্বাদু পয়া, পুঁটি, শোল, শিঙি, মাগুর, ট্যাংরা সহ দেশীয় মাছের কারণে এলাকাটির জনপ্রিয়তা মূলত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখানে তিস্তার সুস্বাদু টাটকা বোরোলি মাছও অন্যান্য এলাকার থেকে কিছুটা কম দামে বিক্রেতাদের কাছে পাওয়া যায়। দুপুর হতেই রাস্তার ধারে বসছে সার সার ছোট মাছের দোকান। গত কয়েক বছর ধরে এখানে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের থেকে মাছ কিনতে যথেষ্ট ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্ষার মরশুমে নদীয়ালি মাছ কিনতে স্থানীয়রা তো বটেই, শিলিগুড়ি থেকেও বহু মানুষ গাড়ি নিয়ে এখানে হাজির হচ্ছেন। আর এত মানুষের আনাগোনায় লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে বিক্রেতাদের। কিন্তু গজলডোবা ব্রিজ সংস্কারের জন্য ১৪০ দিন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে মাছ বিক্রেতারা।
বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে গিয়ে দেখা গেল কার্যত খাঁখাঁ করছে এলাকাটি। সাধারণত প্রাক বর্ষার এই সময় জায়গাটি ভিড়ে গমগম করে। ছোট-বড় গাড়ি, বাইক নিয়ে নদীর টাটকা বোরোলি কিনতে ভিড় জমান ক্রেতারা। এখানে বিক্রেতা দেবারু মহম্মদ করোনার সময় সর্বপ্রথম মাছ নিয়ে বসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘মূলত শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা আমাদের এখানে মাছ কিনতে আসতেন। শুধু তাই নয়, অগ্রিম দিয়েও অনেকে অর্ডার করতেন। কিন্তু এখন ব্রিজ বন্ধ থাকায় বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছে।’
এখানে সারাবছর বিক্রেতার সংখ্যা ১০-১২ জন থাকলেও বর্ষার দিনে সংখ্যাটা ১৫-১৬ তে এসে পৌঁছায়। কাঠামবাড়ি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রামের অনেক মৎস্যজীবীরাও বর্ষার কয়েকটা মাস ক্রেতাদের জন্য মাছ নিয়ে হাজির হন। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে মাছের দামও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন মৎস্যজীবীরাও।
বিক্রেতা আজগর আলির কথায়, ‘খোলা আকাশের নীচে পেটের দায়ে একসময় মাছ বিক্রি শুরু করেছিলাম। দেখতে দেখতে অনেকটা দিন পেরিয়ে গেল। চলতি বর্ষায় সেতু বন্ধ থাকায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।’
বিক্রেতা হাসিবুল হক, আলম আলিরা জানান, গত এক সপ্তাহে বিক্রি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। অথচ শুধু বোরোলি নয়, নদীর সুস্বাদু ট্যাংরা এবং কুচো চিংড়ির প্রচণ্ডরকম চাহিদা থাকে। সেখানে দেশীয় মাছও এখন কিছুটা কম দামে তাঁদের বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে মাছের পাশাপাশি অনেকে চা, পিঠেপুলির পসরা নিয়েও হাজির হন। মাছ কেনাবেচার মাঝে চায়ের সঙ্গে গরম গরম মালপোয়া খেয়ে রসনা তৃপ্তি করতেন ক্রেতারা। কিন্তু এখন ব্রিজ বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তাঁরাও।