রাজ্য

মাছের টানে ঘরে ফেরেন পরিযায়ীরা, বৃষ্টিহীন দক্ষিণ দিনাজপুরে নৌকা মেরামতি জেলেদের

বালুরঘাটঃ আত্রেয়ীর জলের নাব্যতা এমনিতেই কমেছে। ফলে মাছ ধরার নৌকার ব্যবহার সারা বছর তেমনভাবে হয়না বললেই চলে। এদিকে শ্রাবণ মাস চলছে। কিন্তু বৃষ্টিহীন দক্ষিণ দিনাজপুর। এখনও সেভাবে বর্ষার দেখা নেই। যদিও বর্ষায় জল বাড়লে মাছ ধরার আশায় বুক বাঁধছেন মৎস্যজীবীরা। বর্ষাকাল আসলেই এই নৌকার কদর বেড়ে যায়। আবার বর্ষা পেরিয়ে গেলে সারা বছর পড়ে থাকে নৌকাগুলো,  ক্ষতিগ্রস্তও হয় বিস্তর। বর্ষা শুরুর আগেই নৌকার প্রয়োজনে সেগুলো মেরামতির কাজে নেমেছে ধীবর সম্প্রদায়।

এই সময় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহর লাগোয়া হালদারপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যজীবীদের বাস। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া কাজ ফিরে পায় এই বর্ষায়। সারা বছর অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও নিজেদের পেশার কাজের সুযোগ মিলে মাত্র তিন মাসের মতো। কারণ বর্ষাকালেই এই মানুষদের মুখে দেখা যায় চওড়া হাসি। সাধারণ মানুষ যেমন পুজোর সময় দূরদূরান্ত থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। এদের ক্ষেত্রে অনেকটাই সেই রকম। তবে পুজো নয় বর্ষাকালটা এদের কাছে আনন্দের মরশুম। পরিবার ছেড়ে অর্থের সন্ধানে ভিন রাজ্য কিংবা কেউ অন্য পেশায় পেটের তাগিদে চলে যেতে বাধ্য হন। তারাই বর্ষার সময় এর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি মাছের আনাগোনা কমে গিয়েছে জেলার নদী গুলিতে। শুধু আত্রেয়ী নদীতে নয়। জেলার অন্য নদীগুলির অবস্থাও একইরকম। এর ফলে সংসার চালানোর দায়ে কেউ বা রাজমিস্ত্রি, আবার কেউ কাঠের কাজ কিংবা ভিন রাজ্যে যোগানদারের কাজে যেতে বাধ্য হন। তবে বর্ষা এলে পূর্বপুরুষদের পেশার টানে অন্য পেশাতে থাকতে মন চায় না। তখন পেশার টানে ঘরে ফিরে নৌকা সারাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। বর্ষার আগে এই নৌকা সারিয়ে প্রায় তিন মাস সংসার অতিবাহিত করে থাকেন মৎস্যজীবীরা।

প্রবীণ মৎস্যজীবী গুজরাল হালদার বলেন, ‘মৎস্য দপ্তরের তরফে আমাদের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোনও সুযোগ-সুবিধা পাই না। পেটের তাগিদে পৈতৃক পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকেছেন। তবে বর্ষা শুরুর আগে আবার আসা জাগে। তাই নৌকা তৈরি ও মেরামতির কাজ করছি। এখন ভালো রোদ রয়েছে। নৌকার রং শুকোতে সুবিধা হয়। কিন্তু শাল কাঠের দাম প্রচন্ড। তাই অন্য কাঠ দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের ভাতার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।’

নদীর পাশে এক মনে নৌকা সারাই করছিলেন অচিন্ত্য হালদার। তার কথায়, ‘সারা বছর মাছ ধরি। কিন্তু তেমন মাছ পাই না। বর্ষাকালে কয়েক মাস মাছ ধরার চাহিদা বেড়ে যায়। কারণ এই সময় নদীতে মাছের আনাগোনা বেশি থাকে। তাই বর্ষার আগেই নৌকা সারিয়ে ফেলতে হয়। এবছর বর্ষা দেরিতে আসছে। তাই নৌকা মেরামতির কাজে নেমেছি। এখন নৌকায় রং করা হচ্ছে। বৃষ্টি চলাকালীন মাছ নদীর নিচে থেকে উপরিতলে উঠে আসে। অনেক সময় বৃষ্টির মধ্যেই আমরা এই নৌকার ভরসায় মাছ ধরতে নদীতে নামি।’

Sandip Sarkar

Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Recent Posts

উৎসব কই, বড় অসহ্য নির্বাচনের পরিবেশটা

গৌতম সরকার দিন যে আমার কাটে না রে...। কী যে যন্ত্রণা! কোথাও ভোট হয়ে গিয়েছে।…

5 mins ago

যে শালিক মরে যায় কুয়াশায়, সে তো আর…

দ্যুতিমান ভট্টাচার্য সকালে এক শালিক দেখা মানেই বুক দুরুদুরু! এই রে দিনটা খারাপ হতে চলেছে!…

21 mins ago

আবেগের ভক্তিরস বনাম দারিদ্র্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য মন্দিরের মতো দেখতে রাজকীয় অযোধ্যা রেলস্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে একটি কাঠবেড়ালির…

31 mins ago

Supreme court | উপাচার্য নিয়োগে রাজনীতি বরদাস্ত নয়, বোসকে কড়া বার্তা সুপ্রিম কোর্টের

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজনীতি বরদাস্ত নয়। স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।…

48 mins ago

Gang rape case | চলন্ত ট্রেনে গণধর্ষণের শিকার মডেল! প্রায় ২ মাস পর অভিযোগ দায়ের

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: চলন্ত ট্রেনে নেশার জিনিস খাইয়ে এক মডেলকে গণধর্ষণের (Gang rape case)…

52 mins ago

Hardik Pandya Banned | মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে দুঃসংবাদ! পরের আইপিএলে দলের প্রথম ম্যাচে নির্বাসিত হার্দিক

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: একে তো ঘরের মাঠে লখনউ সুপার জায়ান্টসের (Lucknow Super Giants) কাছে…

2 hours ago

This website uses cookies.