নিউজ ব্যুরো: শুধু গঙ্গা ও ফুলহর নয়, গৌড়বঙ্গের দুই জেলায় ফুঁসছে টাঙন, পুনর্ভবা আর মরা মহানন্দা। কোথাও ভাঙল বাঁধ, তো কোথাও ভাঙার উপক্রম। বাঁধভাঙা জলে ভাসছে (Flood Situation) গঙ্গারামপুর (Gangarampur) ও তপন (Tapan) ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ডুবে গিয়েছে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি। পুজোর মুখে ঘুম উড়েছে গঙ্গারামপুর, তপন, বুনিয়াদপুর, ও গাজোলের কৃষকদের।
প্রবল স্রোতে রবিবার গভীর রাতে গঙ্গারামপুর ব্লকের নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যাদববাটী ঝাড়তলায় পুনর্ভবার বাঁধ ভেঙে যায়। সকাল হতে না হতেই প্লাবিত হয়ে পড়ে যাদববাটী, তপনের বাংলাপাড়া, সুতইল, কসবা, বাটোর সহ একাধিক গ্রাম। ধান সহ নানা ধরনের সবজির জমি নদীর বাঁধভাঙা জলে ডুবে গিয়েছে। খবর পেয়ে সোমবার এলাকায় যান গঙ্গারামপুরের বিডিও অর্পিতা ঘোষাল, তপনের বিডিও তীর্থঙ্কর ঘোষ, তপন থানার আইসি জনমারি ভিয়ান্নে সহ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা। গঙ্গারামপুর ব্লক প্রশাসনের তরফে ত্রিপল ও ত্রাণ বিলি করা হয়।
এক দুর্গত মানিকচন্দ্র বিশ্বাস জানালেন, ‘ভোরবেলা জলের আওয়াজ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি, বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বহু চেষ্টা করেও রক্ষা করা গেল না। চাষাবাদের উপর আমাদের সংসার নির্ভর করে। বাঁধ ভেঙে জল ঢোকায় জমির সব ফসল ডুবে গিয়েছে। পুজোর মুখে চরম আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল।’
গঙ্গারামপুরের বিডিও অর্পিতা ঘোষাল জানান, ‘যাদববাটিতে বাঁধ ভেঙেছে। কিছু মানুষ জলবন্দি হয়েছে। তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ অন্যদিকে, তপনের বিডিও তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘গঙ্গারামপুরে বাঁধ ভাঙায় তপনের বেশ কিছু এলাকা জলে ডুবেছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।’
এদিকে গাজোলে (Gazole) বৃষ্টি থামলেও রেহাই নেই। কিছু কিছু করে জল বাড়ছে টাঙন এবং মরা টাঙনে। দিন কয়েক আগে জলের চাপ বাড়ায় বেশ কিছু এলাকায় নদী বাঁধে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিডিও। বিডিওর রিপোর্টের ভিত্তিতে বেশ কয়েক জায়গায় বাঁধ মেরামতের কাজ করেছে সেচ দপ্তর।
তবে বেশ কিছু এলাকায় জল বাড়ার কারণে তেমনভাবে বন্যার প্রকোপ দেখা না দিলেও, বেশ কিছু বাড়িতে ঢুকেছে জল। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতে খুব সহজে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা যায় সেই বিষয় নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা করেছে ব্লক প্রশাসন। এদিন চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমি দপ্তরের চেয়ারম্যান রঞ্জিত সরকার, গাজোল থানার আইসি চন্দ্রশেখর ঘোষাল,যুগ্ম বিডিও সুব্রত শ্যামল। ওই এলাকার শখানেক পরিবারের হাতে তুলে দিলেন শিশু খাদ্য এবং শুকনো খাবার। গাজোলের যুগ্ম বিডিও সুব্রত শ্যামল জানালেন, ‘এখনই আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কোনও কারণ নেই।’
অন্যদিকে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর, বৃষ্টি কমায় ফরাক্কার গঙ্গায় জল একই উচ্চতায় রয়েছে। নতুন করে জল আর বাড়েনি। বিহারের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় মুঙ্গের পর্যন্ত জল কিছুটা বেড়েছে। যদিও এতে করে অবশ্য ফরাক্কার জলস্ফিতির খুব একটা হেরফের হবে না। কারণ সেই জল ফারাক্কা আসতে গেলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আসতে হবে হবে। ব্যারেজের একটি তথ্য অনুযায়ী, এখন মূল গঙ্গা দিয়ে ডাউনে প্রায় ১২ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল প্রবাহিত হচ্ছে। সমস্ত গেটই প্রায় খোলা রয়েছে। কিছুদিন আগে ভরা বৃষ্টিতে নদীর ডাউনস্ট্রিমে ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ কিউসেকের আশেপাশে প্রবাহিত হয়েছিল। এখন নেপাল বিহার থেকে ছাড়া জল গঙ্গাতে এলে ভাঙন ও প্লাবনের আশঙ্কা থাকবে। তাই গঙ্গা পারের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। ফারাক্কার বিডিও জুনায়েদ আহমেদ এবং শামসেরগঞ্জ এর বিডিও সুজিত চন্দ্র লোধ জানিয়েছেন, জল এখন স্থিতাবস্থায় রয়েছে। তবে বিহার বা উপরিভাগের জল এলে কি অবস্থা হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।