পূর্ণেন্দু সরকার ও শুভদীপ শর্মা, জলপাইগুড়ি: মানুষ ও হাতির সংঘাত থেকে হাতি চোরাশিকার রুখতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণ শাখাকে ৭ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন করল রাজ্য বন দপ্তর (Forest Department)। তার মধ্যে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ইতিমধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বন্যপ্রাণ বিভাগগুলিতে। এদিকে, ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির জঙ্গল সংলগ্ন রাস্তায় হাতির হামলা রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বন দপ্তর।
উত্তরবঙ্গে হাতির উপদ্রব ও মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। প্রতি মাসেই হাতির আক্রমণে ফসলের পাশাপাশি সম্পত্তির ক্ষতি করছে হাতির পাল। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। তার উপর হাতির চোরাশিকার সম্প্রতি না ঘটলেও চোরাশিকারিদের আনাগোনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে।
হাতি লোকালয়ে চলে এলে বন্যপ্রাণ বিভাগের স্কোয়াডগুলির কাছে গাড়ি থাকলেও অনেকসময় তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না। কারণ, একাধিক স্কোয়াডের গাড়িগুলি অনেকসময় স্টার্ট নেয় না পুরোনো হয়ে যাওয়ায়। অর্থের অভাবে গাড়ির জ্বালানিরও সমস্যা হয়। তাছাড়া হাতি উপদ্রুত এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যদের দিয়ে তৈরি কুইক রেসপন্স টিমের অধিকাংশের কাছে ঘটনাস্থলে দ্রুত যাওয়ার মতো গাড়ি নেই। ফলে সময়মতো খবর পেয়েও হাতি তাড়াতে যেতে পারে না তারা।
এইসব সমস্যা সামাল দিতে রাজ্যের বন্যপ্রাণ বিভাগগুলিকে এই অর্থবরাদ্দ করেছে রাজ্য বন দপ্তর। উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ নর্দার্ন সার্কেলের মধ্যে গরুমারা ও জলদাপাড়া বন্যপ্রাণ বিভাগ, দার্জিলিং বন্যপ্রাণ বিভাগ ও বক্সা টাইগার রিজার্ভকে প্রথম কিস্তির টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই টাকা গাড়িভাড়া করা ও গাড়ির জ্বালানি কেনায় ব্যয় করা হবে। বন্যপ্রাণ বিভাগের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে মানুষ ও হাতির সংঘাত এড়াতে, লোকালয় থেকে হাতি তাড়াতে বন্যপ্রাণ বিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।’
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে হাতির সংখ্যা ৬০০-রও বেশি। অসম ও ভুটানের হাতিরা আসা যাওয়া করায় সব মিলিয়ে প্রায় ৮০০টি হাতি উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে ঘোরাফেরা করে। তবে, এত বড় এলাকায় হাতিদের সংরক্ষণ, মানুষের সঙ্গে সংঘাত এড়ানো, পাচার রুখতে বরাদ্দ অর্থ তুলনায় অনেকটাই কম।
এদিকে, চালসা থেকে ময়নাগুড়িগামী জাতীয় সড়কে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় হাতির হামলা রুখতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে বন দপ্তর। পাশাপাশি জাতীয় সড়কের জঙ্গলের পথে টোটোর চলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে গরুমারা ও লাটাগুড়ি জঙ্গলের মাঝে মহাকালধামের কাছে হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হন মেটেলির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শুকরু মহম্মদ। এর আগেও জাতীয় সড়কের এই পথে একাধিকবার এই ধরনের ঘটনা হয়েছিল।
শুক্রবার বন দপ্তরের তরফে জাতীয় সড়কের এই পথে টোটোর ওপর নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গরুমারা সাউথ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার ধ্রুবজ্যোতি বিশ্বাস কর্মীদের নিয়ে এই পথে নজরদারি চলান। অনেক টোটো এদিন জঙ্গলে প্রবেশ করতে গেলে তাদের আটকে দেওয়া হয় বিচাভাঙ্গা রেঞ্জ অফিসের সামনে। বন দপ্তরের লাটাগুড়ি রেঞ্জের তরফেও জঙ্গলের বিভিন্ন পথে বনকর্মীদের টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়। রেঞ্জ অফিসার জানান, এই পথে যাতে টোটো চলাচল না করে সেইজন্য বনকর্মীদের লাগাতার নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে।