কালিয়াগঞ্জ: সাহেবঘাটায় নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দফায় দফায় বৈঠক করছেন জেলা পুলিশ, সিআইডি, তদন্তকারী আধিকারিকরা। ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গঠন করা হয়েছে ‘সিট’। কবে সিটের সদস্যরা তদন্ত করতে সাহেবঘাটার আসবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন গোটা গ্রাম। গ্রামবাসীদের আশা, এবার সুবিচার হবেই।
জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কথা হয়েছে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন টোটো চালক অপরজন কালিয়াগঞ্জের লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা শামীম। যদিও তাকে গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা ফোন করলে মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে দেন। বর্তমানে ওই মোবাইল ফোনের নম্বর ট্র্যাক করে পাওয়া যাচ্ছে ওই যুবক পঞ্জাবে রয়েছেন। এদিকে নাবালিকা যেদিন নিখোঁজ হয়েছিল সেই রাতে নাবালিকার ঠাকুরদা চার জনকে ওই পুকুর পাড়ে মদ খেতে দেখেছিল। সেখান থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। তাহলে কি ওই নাবালিকাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল? অভিযুক্ত যুবকের সাহেবঘাটা এলাকার একাধিক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে আলাপ হয়। তারা কে? ময়নাতদন্ত কেন রাতে করা হল? তার জন্য পর্যাপ্ত আলো ছিল কিনা? পরিবারের সদস্যরা সেখানে হাজির ছিলেন কিনা? ময়নাতন্তের পরে কেন সুর তাল লেখা হল? মৃতদেহ নেওয়ার সময় কে কে স্বাক্ষর করেছেন? এইসব একাধিক প্রশ্ন নিয়ে তদন্ত করছেন তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত, কালিয়াগঞ্জের মালগাঁও পঞ্চায়েতের গাঙ্গুয়া গ্রামের নাবালিকা। স্থানীয় সাহেবঘাটা হাই স্কুল থেকে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। এ মাসেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। কিন্তু তার আগেই ২১ এপ্রিল সকালে বাড়ি থেকে প্রায় দু’শো মিটার দূরে পালাইবাড়ি এলাকার পুকুরের ধারে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করে পুকুরের জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিষ খেয়ে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দাবি করেন রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার সানা আখতার। যদিও মৃতার পরিবারকে না জানিয়েই, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তারপরই প্রতিবাদ আরও তীব্র হয়। ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর বিরুদ্ধে সরব হন মৃতার পরিবার। তারপর থেকেই সাহেবঘাটার বাড়ি থেকে উধাও পঞ্চায়েত প্রধানের পরিবার। প্রতিবাদের আগুন জ্বলে সাহেবঘাটা এলাকায়। তারপর ২৪ এপ্রিল হামলা হয় কালিয়াগঞ্জ থানায়। ২৬ এপ্রিল রাধিকাপুরের চাঁদগাঁওয়ে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এক নাবালিকার মৃত্যু ঘিরে গোটা উত্তর দিনাজপুর বিক্ষোভে তেঁতে উঠে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে নিযুক্ত হন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার দময়ন্তী সেন, প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেনকুমার বিশ্বাস এবং প্রাক্তন আইপিএস পঙ্কজ দত্ত। যে কোন মুহূর্তে তাঁরা কালিয়াগঞ্জে আসবেন বলে ডিআইজি অনুপ জ্যাসওয়াল জানান। এখন কবে তাঁরা আসবেন, কতদিনে সুবিচার মিলবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুণছেন গ্রামবাসীরা।