রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: চোখের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার (Free Eyes Treatment) জন্য আসা রোগীদের প্রয়োজন বুঝে চশমা দেন চিকিৎসকরা। রোগী হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে সেই চশমা তৈরি করাতে পারেন। এই জন্য রাজ্য সরকারের ‘চোখের আলো’ প্রকল্প (Chokher Alo Scheme) রয়েছে। কিন্তু চলতি মাস থেকে এই প্রকল্পে চশমা দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দার্জিলিং জেলায় এই সমস্যার জেরে প্রচুর গরিব মানুষকে দোকান থেকে টাকা খরচ করে চশমা নিতে হচ্ছে। রোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। প্রশ্ন উঠছে, সময় থাকতে কেন স্বাস্থ্য দপ্তর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেনি? সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ তুলসী প্রামাণিক। তিনি বলেছেন, ‘এবার কেন্দ্রীয়ভাবে জেলাকে টেন্ডার করতে বলায় একটু দেরি হয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক এজেন্সি অংশ না নেওয়ায় একবার টেন্ডার বাতিলও করতে হয়েছে। তবে, দ্বিতীয়বার টেন্ডার করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (North Bengal Medical College), শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা হাসপাতাল, কার্সিয়াং এবং মিরিক মহকুমা হাসপাতাল সহ জেলার ব্লক হাসপাতালগুলিতে চোখের আলো প্রকল্পে রোগীদের চশমা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে জেলার সব হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতি মাসে গড়ে ২০০০-২২০০টি চশমার চাহিদা রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে এতদিন স্থানীয়ভাবে টেন্ডার করে এই প্রকল্পে চশমা দেওয়ার জন্য এজেন্সি নিয়োগ করা হত। বাকি জেলা এবং মহকুমা হাসপাতালও নিজের মতো করেই টেন্ডার করে নিত। কিন্তু এবার পুরোটাই কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইন টেন্ডারের মাধ্যমে এজেন্সি নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে।
মেডিকেল সহ জেলায় সব হাসপাতালে জুন মাসে পুরোনো এজেন্সির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ১ জুলাই থেকে মেডিকেল সহ কোনও হাসপাতালে আর চশমা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের চক্ষু বিভাগে ডাক্তার দেখান বাগডোগরার একটি চা বাগানের শ্রমিক রাধিকা টোপ্পো। তাঁকে চিকিৎসক চশমা নিতে বলেছেন। সেই মতো তিনি ওই বিভাগের এক কর্মীর কাছে চশমার কাউন্টার কোন দিকে সেটা জানতে চান। ওই কর্মী তাঁকে জানিয়ে দেন, চশমার কাউন্টার বন্ধ। বাইরে থেকে চশমা বানিয়ে নিন। এই শুনে ক্ষুব্ধ রাধিকা বললেন, ‘আমাদের বাগানের অনেকেই মেডিকেল থেকে চশমা নিয়ে গিয়েছেন। বাইরে থেকে চশমা বানাতে তো অনেক খরচ। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাব?’
চক্ষু বিভাগের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘রোগীকে পরীক্ষার পরে তাঁর চশমার প্রয়োজন থাকলে আমাদের তো প্রেসক্রিপশনে তা লিখতেই হবে। চশমা আবার কবে থেকে দেওয়া হবে সেটা হাসপাতাল সুপার বলতে পারবেন।’
হাসপাতাল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। জুন মাসে বরাতপ্রাপ্ত এজেন্সির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এটা সবার জানা ছিল। তার পরেও কেন আগেভাগে টেন্ডার করে নতুন এজেন্সি নিয়োগ করা হয়নি সেই প্রশ্ন উঠছে।