অসীম দত্ত, আলিপুরদুয়ার: বুধবার দুপুরে জয়ন্তী বাজারে দেখা হল মেরিনা কার্টিয়ার আর ডেসেন ডুপান্টের সঙ্গে। বটতলা চায়ের দোকানে যেভাবে মাটির ভাঁড়ে সুড়ুৎ সুড়ুৎ চুমুক দিয়ে চা খাচ্ছিলেন, দেখে কে বলবে তাঁদের ঠিকানা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে! শিবের টানে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শিবচতুর্দশী উপলক্ষ্যে এসেছেন জয়ন্তীর (Jayanti) মহাকালধামে। গাইড খুঁজছিলেন। তবে শিবরাত্রির ভিড়ে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর চাপে জয়ন্তী থেকে গাইড পাওয়া এদিন ছিল মহাকালের দর্শন পাওয়ার মতোই কঠিন। গাইড না পেয়ে হতাশ সেই বিদেশি দম্পতি শিবভক্তদের সঙ্গেই বড় মহাকালধামের পথে পা বাড়ালেন। মুখে ভোলে বোম ধ্বনি।
সেই ফরাসি দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা ভারত ভ্রমণে এসেছেন। সোমবার দার্জিলিং থেকে সোজা মহাকালধামে চলে এসেছেন। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে ডেসেন বললেন, ‘এই প্রথমবার এসেছি। পাহাড়ি এলাকা খুব ভালো লাগছে। এই মন্দিরে যেতে গিয়ে ভারতের পাশাপাশি আরেকটি দেশও দেখার সুযোগ হয়ে গেল।’
বক্সা টাইগার রিজার্ভের রাজাভাতখাওয়া প্রবেশগেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এদিন দুপুর তিনটা পর্যন্ত মোটর সাইকেল বাদ দিয়ে টোটো, অটো, চারচাকার ছোট গাড়ি মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার গাড়ি জয়ন্তীর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে। পাশাপাশি জয়ন্তী থেকে বহু সংখ্যক গাড়ি বাইরে বেরিয়েছে। সব মিলিয়ে শিবচতুর্দশী উপলক্ষ্যে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে ভুটানে অবস্থিত জয়ন্তী মহাকালধামে। এদিন জয়ন্তীতে গিয়ে দেখা গেল, ভারত থেকে ভুটান যত দূর চোখ যায় শুধু কালো কালো মাথার ভিড়। থিকথিক করছে জয়ন্তী বাজার থেকে ভুটানের ছোট মহাকালধাম অবধি এলাকা। আর যেসব পুণ্যার্থী বড় মহাকালধামে জল ঢালার আশায় রয়েছেন, আগামী দু’তিনদিনের আগে তাঁদের ফিরে আসার সুযোগ কমই।
মঙ্গলবার অবধি ভিড় না হলেও এদিন কিন্তু ছোট মহাকালধামেও ব্যাপক ভিড় ছিল। এদিন বিকাল ৪টা নাগাদ ছোট মহাকালধামে গিয়ে দেখা গেল, জল ঢালতে প্রতিবেশী দেশ ভুটান থেকে শিবভক্তদের যে লাইন শুরু হয়েছে সে লাইন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে গিয়েছে। শিবভক্তদের লাইন যেমন দু’দেশের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে, তেমনই প্রতিবেশী দুই দেশের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা নিজের নিজের দেশের মাটিতে পুণ্যার্থীদের সুরক্ষা দিতে ২৪ ঘণ্টা তৎপর রয়েছেন।
একটা নালার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ভুটানের এলাকা। সেখান থেকেই পুণ্যার্থীদের দায়িত্ব চলে যায় সেদেশের পুলিশ ও প্রশাসনের হাতে। শিবভক্তদের নিরাপত্তায় ভারতের তরফে যেমন বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। একইরকমভাবে প্রতিবেশী দেশ ভুটানের তরফেও ওই একই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ওই দুর্গম পাহাড়ে শিবভক্তদের নিরাপত্তায় অটল ছিল।
এদিন যে ভিড়টা ছিল, তার প্রায় পুরোটাই ভক্তদের জমায়েত হলেও কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় দেখা গেল বেশ কয়েকশো ছোট তাঁবু। সেইসব তাঁবুতে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কিন্তু শিবের মাথায় জল ঢালতে আসেননি। এসেছেন পিকনিক করতে। শিবরাত্রির সময় জঙ্গলে প্রবেশ নিয়ে বন দপ্তরের কিছু শিথিলতা থাকে। বক্সা ব্র্যাঘ্র-প্রকল্পের কোর এলাকায় প্রবেশ করা যায়। সেই সুযোগ নিয়ে পিকনিকের উদ্দেশ্য নিয়ে লোকজন এখানে এসেছে।

