নাগরাকাটা: পাতা তোলার পরিবর্তে এখন গাছ থেকে পোকা বাছছেন শ্রমিকরা। ডুয়ার্সের বহু চা বাগানের দৃ্শ্য এখন ঠিক এরকমই। বানারহাট এলাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। সেকেন্ড ফ্লাশের শেষ লগ্নের এই মরসুমে নতুন কুঁড়ি মেলা তো দূরের কথা। লুপারের মারণ থাবায় সেখানে একরের পর একর চা গাছ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি যে নজিরবিহীন মানছেন চা বিজ্ঞানীরাও। চা গবেষণা সংস্থার (টিআরএ) তরাই শাখার অ্যাডভাইসারি অফিসার ডঃ তৃণা মন্ডল বলেন, ‘বৃষ্টি নেই। উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। যে কোন কীট পতঙ্গ সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ঠিক এরকমই। ফলে চা বাগানে এবার লুপারের হামলা যে অস্বাভাবিক নয় তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। ’
পরিস্থিতিপ আন্দাজ মেলে ডুয়ার্সের চামুর্চি চা বাগানের দৃশ্য দেখলেই। গত ৩ দিন ধরে সেখানে শ্রমিকদের পাতা তোলার কাজ না করিয়ে শুধু লুপার বাছার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। ৪৫০ জন শ্রমিক মোট ১২০০ কিলোগ্রাম লুপার সংগ্রহ করেন। সেটাও ৩৫০ হেক্টরের বাগানটির মাত্র ৪০ হেক্টর জুড়ে। পরে সংগৃহীত পোকাগুলি নষ্ট করে দেওয়া হয়। একই পরিস্থিতি আশপাশের নিউ ডুয়ার্স, চুনাভাটি, বানারহাট, গ্যান্দ্রাপাড়া, আমবাড়ি সহ বিন্নাগুড়ি এলাকার আরও বহু বাগানে। শ্রমিকদের কোথায় কাজ দেবেন সেটা ভেবে কোন কূল কিনারা পাচ্ছেন না পরিচালকরা। চামুর্চির ম্যানেজার মহেশ শর্মার কথায়, গোটা বাগান লুপারে ছেয়ে গেছে। দু সপ্তাহ আগেও পরিস্থিতি ঠিক এতটা ভয়ঙ্কর ছিল না। বিগত ১৫ বছরে রোগপোকার এমন হামলা চোখে পড়ে নি। রাসায়নিক স্প্রে করলেও তা হজম করে ফেলছে পোকাগুলি। চা বণিকসভা ডিবিআইটিএ-র সম্পাদক সঞ্জয় বাগচি বলেন, ‘এমন বহু বাগান রয়েছে যারা সদ্য সমাপ্ত মে মাসে তাঁদের মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশই ব্যবহার করতে পারে নি। আসলে কাঁচা পাতাই তো নেই। লুপার সব খেয়ে ফেলেছে।’ আরেকটি চা বণিকসভা আইটিপিএ-র ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা বলেন, ‘ছায়াগাছে পাড়া ডিম থেকে একটু বড় হয়েই প্যারাসুট ট্রুপারদের মতো চা গাছের ওপর লুপার টপটপ করে ঝরে পড়ছে। সংখ্যা এখন এতোই বেশী যে হাতে তুলে ঝাড়াই বাছাই করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।’