অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: বাঙালির সঙ্গে নববর্ষের সম্পর্কটা আর পাঁচটা সাধারণ দিনের থেকে একটু আলাদা। সকালে ভোগপ্রসাদ দিয়ে সিদ্ধিদাতা গণেশের পুজোর পরে দুপুর বা রাতে নববর্ষের স্পেশাল ভূরিভোজ। এই দিনটায় আনন্দ বা পেটপুজোয় কোনও খামতি কারও পছন্দ নয়। কিন্তু এই বছর নববর্ষের সেই চেনা মেজাজ ফিকে করতে বাজারদর একাই একশো। নতুন বছরের আগে বাজারে সবজি, ফল বা ফুল কিনতে গিয়ে মধ্যবিত্তকে জোর ধাক্কা খেতে হচ্ছে। দামের ঠেলায় সকলের চক্ষু চড়কগাছ। রবিবার ছিল নীলষষ্ঠী। সোমবার চৈত্র সংক্রান্তি এবং মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখ। এদিন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের দিনবাজার, বৌবাজার, স্টেশন বাজার কিংবা বয়েলখানা বাজারে জিনিসপত্রের বেশি দামের ব্যাপারে সব ক্রেতাই একমত হলেন।
পরপর তিনদিনের উৎসবে পুজোর জন্য ফুলের চাহিদা এমনিতেই বেশি। এদিন নীলকণ্ঠ প্রতি পিস ৫ টাকা, এক একটি আকন্দ ফুলের মালা ৩০-৩৫ টাকায় পাওয়া গেল। গাঁদা ফুলের মালার দাম কোথাও ২৫, আবার কোথাও ৩০ টাকা। এমনকি ১০ বা ২০ টাকায় পাওয়া কুঁচো ফুলের পরিমাণও কম। অন্যদিকে, চৈত্র সংক্রান্তির নিয়ম অনুয়ায়ী, খাবারে তেতো এবং টক রাখা জরুরি। তাই এদিন কাঁচা আম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেল। এছাড়া কয়েকটি নিম পাতার ডাল ১০ টাকা, তিনটি গিমা শাকের আঁটি ২০ টাকা, এঁচোড় ৬০-৮০ টাকা কেজি। সাইজ অনুয়ায়ী পটল মিলল ৬০-৭০ টাকায় এবং সজনে ডাঁটার দাম ৮০ টাকা কেজি প্রতি। এক সবজি বিক্রেতা দীপক সেন বললেন, ‘চৈত্র সংক্রান্তিতে এঁচোড়, কাঁচা আমের দাম একটু চড়া থাকে। তাছাড়া এবার মরশুমে আমের মুকুল সেভাবে টেকেনি। তাই দামও সেই মতো বেড়েছে।’
বিক্রেতাদের মতে, সংক্রান্তি স্পেশাল জিনিসগুলির দাম চড়া। শহরের এক বাসিন্দা সুব্রত কুণ্ডু বাজারে এসে ফলের দাম শুনে একটি করে ফল কিনতে বাধ্য হলেন। তাঁর কথায়, ‘নববর্ষে বাড়িতে ফলপ্রসাদ দিয়ে ছোট করে পুজো করি। কিন্তু ফলের দাম শুনে আঁতকে উঠলাম। নিয়মরক্ষায় একটি করে ফল কিনেছি।’ ফলের বাজারে এদিন মালভোগ কলার চারটের দাম ২৫-৩০ টাকা। পাশাপাশি মুসম্বি ৬০-৭০ টাকা প্রতি কেজি, আপেল ২০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, আঙুর ১২০-১৩০ টাকা, কালো আঙুর ২০০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেয়ারার দাম ৮০ টাকা প্রতি কেজি থেকে শুরু হয়ে ১০০ বা ২০০ পর্যন্ত আছে। অন্যদিকে, গরম পড়তে না পড়তেই বাজারে ১২০-১৭০ টাকা প্রতি কেজিতে বেগুন ফুলি আম, ৩০০-৩৫০ টাকা প্রতি কেজিতে গোলাপখাস পাওয়া যাচ্ছে।
এবিষয়ে ফল বিক্রেতা রামু শা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ল। সব জিনিসের দামই আকাশছোঁয়া। ফলের দাম উৎসব বা পুজোর দিনগুলিতে বাড়ে৷ আবার অনেক ফল বাইরে থেকে আসে। যাতায়াতের খরচ রেখে লাভ না করলে আমরা কী খাব!’ এছাড়াও অন্যান্য ফলের মধ্যে সুন্দরবনের জামরুল ১৫০ টাকা, শাকালু ১৩০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা কেজি দরে মিলছে। আবার নারকেল ৫০-৬০, ছোট ডাব ৩০ টাকা, তরমুজ ৩০ টাকা কেজি। তাই এদিন সবজির থেকে ফলের বাজার নিয়েই সাধারণ মানুষ বেশি চিন্তিত ছিল। যদিও নববর্ষের পরে ফলের দাম কমার কথা বাজারে শোনা গেলেও এক শহরবাসী টুসি চক্রবর্তী তা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘বৈশাখ মাসের মঙ্গলবার করে মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত থাকে। তাই অন্য সবকিছুর দাম কমলেও ফলের দাম কমবে বলে মনে হয় না।’