রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

Land Scam | গৌতমের আমলে অনিয়ম, গজলডোবার জমি-দুর্নীতি জানতেন নবান্নের কর্তারাও

শেষ আপডেট:

শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হওয়ার দশা। শুধু স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ নন, নবান্নের বড় কর্তাদের একাংশের প্রশ্রয়েই গজলডোবায় (Gajoldoba) ফুলেফেঁপে উঠেছে জমি মাফিয়ারা (Land Mafia)। সরকারি নথি বলছে, গজলডোবায় সরকারি জমি দখলের (Land Scam) কথা অনেক আগেই থেকেই জানতেন নবান্নের বড় কর্তারা। শুধু জানাই নয়, সরকারি রিপোর্টে রঞ্জন শীলশর্মা, দুলাল দত্তদের ‘দখলকারী’ হিসাবে চিহ্নিতও করেছিলেন তাঁরা। তারপরও তৃণমূল নেতাদের নামে বরাদ্দ হয়েছে সরকারি বাজারের স্টল। রঞ্জনের স্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁকে জমির লিজ পাইয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন খোদ জলপাইগুড়ির তৎকালীন জেলা শাসক। নবান্নে ডেকে শুনানিও হয়েছিল। সবকিছু জানার পরও কেন দখলদারের প্রতি এতটা সদয় হয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা? আর এখনই বা কেন শুধু রঞ্জনের বাগানবাড়িতেই বুলডোজার চালানো হচ্ছে? এইসব নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।

তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীরা যে গজলডোবায় জমি দখল করেছেন তা অজানা ছিল না প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী এবং বর্তমানে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবেরও (Goutam Deb)। গৌতম মন্ত্রী থাকাকালীনই গজলডোবার উন্নয়নে নানা কাজ হয়েছে। সেইসময় সেখানে ফ্লাইওভার তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। পরিকল্পনা হয়েছিল ফুড কোর্ট তৈরির। সেই কাজের জমির জন্য এলাকার দখলদারদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে ছয় সদস্যের কমিটি তৈরি করেছিল পর্যটন দপ্তর। কমিটি সমীক্ষা করে ৫৪ জন দখলদারের তালিকা তৈরি করেছিল। ২০১৮ সালে ২৮ ডিসেম্বর পর্যটন দপ্তরের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ডিরেক্টর জলপাইগুড়ির জেলা শাসককে চিঠি পাঠিয়ে সেই তালিকা দিয়েছিলেন (মেমো নং-আরটিও/৫৫১/আই(এসএ)পিটি২/২০১৮-২০১৯)। তালিকায় চার বিঘা করে পুকুরের দখলদার হিসাবে নাম ছিল রঞ্জন ও দুলালের। গৌতমের তত্ত্বাবধানেই যাবতীয় কাজ হয়েছিল।

গৌতম দেব তৃণমূলের রাজ্যস্তরের নেতা। সব জেনেও সেইসময়ই কেন দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি তিনি? গৌতমের সাফাই, ‘ফাইলপত্র না দেখে তখনকার কথা বলতে পারব না। গজলডোবায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রকল্প করেছি। মন্ত্রীরা পলিসি তৈরি করেন। এত বড় দপ্তরে কোথায় কী হয় সবকিছু মাথায় রাখা যায় না। সেটা আমলারা দেখেন। ফ্লাইওভারের জন্য কিছু জমি নেওয়া হয়েছিল। কাদের জমি ছিল সেগুলো মনে রাখা সম্ভব নয়।’ জেলা শাসক থেকে জেলা ভূমি সংস্কার আধিকারিক, প্রশাসনের কর্তাদের কেউই গজলডোবার জমি দখল নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। গজলডোবা প্রসঙ্গ শুনেই ফোন কেটে দিচ্ছেন অনেকে।

গজলডোবা ক্যানালের আশপাশের জমি জঙ্গলমহল মৌজার জেএল-১’এর অন্তর্ভুক্ত। ভূমি সংস্কার দপ্তরের একাধিক কর্তা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট মৌজার বেশিরভাগ জমি খাস অর্থাৎ সরকারি। সেই জমিতে পাট্টাও দেওয়া হয়নি। সেই হিসাবে ভোরের আলো প্রকল্পের আশপাশের প্রায় সব জমি সরকারি হওয়ার কথা। পর্যটন দপ্তরের একটি প্রকল্পের সমীক্ষায় দখলদারদের সংখ্যা ৫৪। সেক্ষেত্রে গোটা এলাকায় সেই সংখ্যা কয়েকশো বলেই পুলিশের একাংশ মনে করছেন। এত দখলদার থাকতে কেন তাঁকেই টার্গেট করা হল? তিনি কি তাহলে রাজনীতির শিকার? রঞ্জনের বক্তব্য, ‘দল করি। রাজ্যে আমাদের দল ক্ষমতায়। তাই এখন মুখ খুললে দল ও সরকার উভয়েই বিপাকে পড়বে। সে কারণেই চুপচাপ আছি। দলের নজরে যদি আমি এতই খারাপ হই, তাহলে দল আমাকে বহিষ্কার করুক। তারপর আমি স্বাধীন হয়ে যাব। তখন কোথায়, কোন নেতা, কত জমি দখল করে আছেন, কার মদতে দখল করেছেন, কোন আমলারা জড়িত সব প্রমাণ দিয়ে সবার সামনে আনব। গজলডোবাতেই কাদের কাদের জমি দখলে আছে সেকথাও বলতে পারব। আপাতত শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমি চক্রান্তের শিকার।’

কে চক্রান্ত করছেন, কেন করছেন তা অবশ্য খোলসা করে বলতে চাননি রঞ্জন। তবে তৃণমূলের অনেক রাঘববোয়ালই যে সরকারি জমি লুট করেছেন তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। সেইসব নেতার কুকর্মই কি এখন বিপাকে পড়া রঞ্জনের হাতিয়ার? তাই কি তিনি খুল্লমখুল্লা বহিষ্কারের চ্যালেঞ্জ করছেন?

দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বেদব্রত দত্তের কথা, ‘রঞ্জনবাবু যদি প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মী এবং দলের অনুগত সৈনিক হয়ে থাকেন তাহলে সময়ের অপেক্ষা না করে মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রমাণ সহ সমস্ত তথ্য লিখিতভাবে জানিয়ে দিন।’

সবমিলিয়ে যা পরিস্থিতি তাতে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের গজলডোবার জমি কেলেঙ্কারিতে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার দশা তৃণমূলের।

Kuhelika Barman
Kuhelika Barmanhttps://uttarbangasambad.com/
Kuhelika Barman is working as Sub Editor Since 2016. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Share post:

Popular

More like this
Related

Kaliyaganj | বেতন তোলেন নিয়মিত, করণিকের দায়িত্বে থাকলেও স্কুলে আসেন না উপপুরপ্রধান!

কুশমণ্ডি ও কালিয়াগঞ্জ: একদিকে রাজনীতি অন্যদিকে প্রশাসনিক পদ, তার...

Teacher | মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, ফের পরীক্ষায় বসবেন অনামিকা

রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ : দেড় বছর শিক্ষকতার চাকরি করতে...

Buxa | আশঙ্কাই সত্যি হল, ভাঙছে বক্সার জিরো পয়েন্টের রাস্তা

অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার : প্রতি বর্ষায় পাহাড়ি রাস্তায় ধস...