সিদ্ধার্থশংকর সরকার, মালদা: অযোগ্যদের সঙ্গে যোগ্য শিক্ষকরাও চাকরি হারিয়েছেন। যোগ্যদের সসম্মানে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে চলছে আন্দোলন। বৃহস্পতিবার কলকাতার ‘আচার্য সদন’এর সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, এখনই আন্দোলন প্রত্যাহার করছেন না। এই আবহে পুরাতন মালদায় ২৮ বৈশাখ থেকে শুরু হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা। এবারের উৎসব একেবারে আলাদা। আলাদা তাঁর রং। আসন্ন উৎসবে গানে কথায় শিল্পীরা তুলে ধরবেন উত্তরবঙ্গের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার, চাকরিহারা শিক্ষকদের দুর্দশার কথা। শিল্পকলার করুণদশার কথাও বাদ যাবে না। থাকছে অনুন্নয়ন, গঙ্গা ভাঙন প্রসঙ্গ। উৎসবের সূচনালগ্নেই এই সব জ্বলন্ত বিষয়ের ওপর গান পরিবেশিত হবে। ইতিমধ্যেই শিল্পীরা গান বাঁধতে শুরু করেছেন।
গম্ভীরা গোষ্ঠী ‘লুব্ধক একটি সাংস্কৃতিক প্রয়াস’- এর কর্ণধার রবিশংকর ঘোষ জানিয়েছেন, ‘এবারের গম্ভীরা উৎসবে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জ্বলন্ত সমস্যা যেমন অনুন্নয়ন, গঙ্গা ভাঙন, গাজোল ও চাঁচল পুরসভার হওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ার বিষয়গুলি গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। সামসীর রেলসেতুর প্রয়োজনীয়তার কথাও শিল্পীরা তাঁদের পরিবেশনায় তুলে ধরবেন।’
রবিশংকর ঘোষ আরও বলেন, ‘গম্ভীরা উৎসবকে সফল করে তুলতে জোরকদমে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগ।’
গম্ভীরা শিল্পী সুভাষ সরকার বলেন, ‘অনেক যোগ্য শিক্ষক চাকরি হারিয়ে আজ রাস্তায় নেমেছেন। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা যেমন চিন্তিত, সমান চিন্তিত আমরাও। তাই এই উদ্বেগ গম্ভীরার মাধ্যমে সরকারের সামনে তুলে ধরতে চাই। গম্ভীরা হচ্ছে একটা প্রতিবাদের ভাষা। আমরা এভাবেই প্রতিবাদ করি। অন্য বিষয়ও গম্ভীরায় তুলে ধরা হবে।’
পুরাতন মালদার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যোমকেশ ঘোষ বলেন, ‘গম্ভীরা শিল্পীদের এই উদ্যোগ উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষের মনে কতটা সাড়া জাগায় এবং তাঁদের বার্তা প্রশাসনের কাছে পৌঁছাতে কতটা সক্ষম হয়, সেটাই এখন দেখার। তবে নিঃসন্দেহে, এবারের গম্ভীরা উৎসব পুরাতন মালদার সংস্কৃতিচর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠবে।’
উল্লেখ্য, পুরাতন মালদা শহরের শর্বরী এলাকায় প্রতি বছর এই গম্ভীরা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের এই কয়েকদিন ওই অঞ্চল আনন্দে ভরে ওঠে। কাঁটা নাচ, মুখা নৃত্য, মশান গড়া, গম্ভীরা নৃত্য এবং পথনাটকের মতো লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন আঙ্গিক এই উৎসবে প্রদর্শিত হয়।