গঙ্গারামপুর : বিশেষভাবে সক্ষম নিজের মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধে। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গঙ্গারামপুর ব্লকের নন্দনপুর অঞ্চলের পাটুল গ্রামে। অভিযুক্ত মা নিজের মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে গঙ্গারামপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেন। গঙ্গারামপুর থানার আইসি শান্তনু মিত্রের নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠান। হত্যায় অভিযুক্ত মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
গঙ্গারামপুর ব্লকের নন্দনপুর অঞ্চলের পাটুল গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আজিজ (৩০) পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তার স্ত্রী রিম্পা খাতুন(২৭) একজন গৃহবধূ। আবদুল আজিজ ও রিম্পা খাতুনের দুই ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে আফরিন খাতুন(৯) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ রিম্পা খাতুন তার মেয়ে শিশুকন্যা আফরিন খাতুনকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ঘটনার সময় অভিযুক্তের স্বামী আবদুল আজিজ বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মহিলা এই কাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগ। এরপর অভিযুক্ত মহিলা নিজেই গঙ্গারামপুর থানায় এসে নিজের দোষ কবুল করে আত্মসমর্পণ করেন।
মহিলার কাছ থেকে সব শোনার পর গঙ্গারামপুর থানার আইসি শান্তনু মিত্রের নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। পুলিশ পৌঁছানোর আগে বাড়ির অন্যান্য লোক ও প্রতিবেশীরা ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেনি এতবড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে। পুলিশ যাবার পরে বাড়ির লোক সহ প্রতিবেশীরা জানতে পারেন যে শিশুকন্যাটি মারা গেছে।
এ বিষয়ে মৃত শিশুটির বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, “আমি ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কাজে বেরিয়েছি। বাচ্চার মা আমাকে খাবার তৈরি করে দিয়েছেন। হঠাৎ আমার ভগ্নিপতি আমাকে ফোন করে বলছেন বাড়িতে আসতে। বাড়িতে এসে দেখি আমার মেয়েটি মরে গেছে। কে মেরেছে, কীভাবে মেরেছে, তা বলতে পারব না। এর আগে আমার স্ত্রী দুইবার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তবে অন্য কারও সঙ্গে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক নেই বলেই জানি। আমার মেয়েই আমার জীবন। আপনারা আমার মেয়েকে এনে দিন।” মেয়ের শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মৃতা শিশুটির পিসি ইয়ানুর খাতুন বলেন, “বাচ্চাটি সকাল বেলা নিয়মমতো ব্রাশ করে মুড়িও খেয়েছে। তখন ওই ইশারায় আমাকে বলেছিল ওর ভালো লাগছে না। ওর মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আফরিনকে আমাকে দেখার কথা বলে। দুপুর একটার দিকে আফরিনকে ডাকতে গিয়ে দেখি ওর গা ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যখন বাড়িতে ছিলাম না তার মধ্যে ওর মা কিছু করেছে কিনা তা বলতে পারব না। নিজের চোখে যেহেতু দেখিনি তাই কিভাবে বলতে পারব কে ওকে মেরেছে। আমরা বাড়ির কেউ জানতে পারিনি যে বাচ্চাটি মারা গেছে। পুলিশ এসে আমাদেরকে যখন বলে তখন আমরা বিষয়টি জানতে পারি।”
মৃতা বাচ্চাটির আরেক পিসি রুকমা বিবির অভিযোগ,”বাচ্চাটির মা ছাড়া বাচ্চাটিকে কেউ মারেনি। বাচ্চাটিকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরেছে। বাচ্চাটি বোবা ছিল তাই তার মায়ের তা পছন্দ হত না। বাচ্চাটির মা এর আগে দিল্লিতে পালিয়ে গিয়েছিল। কারও সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা তা বলতে পারব না। বোবা বাচ্চার জন্যই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা শাস্তি চাই। বাচ্চার বাবা এখন কি চায় দেখা যাক।”
এলাকাবাসীদের দাবি, অভিযুক্ত মহিলার দুই বাচ্চার মধ্যে বড় বাচ্চাটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় সব সময় বিরক্ত প্রকাশ করতেন অভিযুক্ত মহিলা। তাছাড়া মহিলাটি এর আগে একাধিকবার বাড়ি থেকে পালিয়ে দিল্লি সহ বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ার ঘটনাও পূর্বে ঘটেছে। তবে তৃতীয় কোন ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে কিনা সে বিষয়ে এলাকাবাসী নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি। মেয়ের এমন করুন পরিণতি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত শিশুটির বাবা আব্দুল আজিজ সহ পরিবারের মানুষজন।