শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: তোর্ষার(Torsha) জলেও বড়সড়ো বিপদের হাতছানি। কোচবিহার পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আবর্জনা সরাসরি এই নদীর জলে মিশছে। আর এই নদী থেকে জল সংগ্রহ করেই তা পরিস্রুত করে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কিছুটা দূরেই এই নদী থেকে জল সংগ্রহের মেশিন রয়েছে। সেখানে আবর্জনা জমে যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই ওই মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের(Dumping Ground) আবর্জনায় একদিকে যেমন নদী দূষণ বাড়ছে অন্যদিকে, পানীয় জল সরবরাহেও ব্যাঘাত ঘটছে। জল সরবরাহে সমস্যা হলে বাসিন্দাদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কোচবিহারে(Cooch Behar) ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
সমস্যার বিষয়টি কোচবিহার পুরসভা মেনে নিয়েছে। কোচবিহারের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হলে কিছু আবর্জনা উড়ে গিয় নদীতে পড়ে। প্রায় এক কোটি টাকা খরচে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশে উঁচু দেওয়াল তৈরি করা হবে। ভোটের পর মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট (এমইডি) ওই কাজ করবে। আশা করছি, এর থেকে আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’ চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘আবর্জনা মাঝেমধ্যে মেশিনে ঢুকে পড়ে। সেইসময় সমস্যা হয়। পরে মেশিন মেরামত করে কাজ চালানো হয়।’
কোচবিহার শহর সংলগ্ন গুড়িয়াহাটি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের গাড্ডারপার এলাকায় কোচবিহার পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে। সেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে শহরের আবর্জনা জমা করা হয়। এই এলাকার পাশেই স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতেরও একটি কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প রয়েছে। রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এই দুই জায়গারই আবর্জনা তোর্ষার জলে মিশছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের প্রবেশপথের পাশে একটি বড় নর্দমা রয়েছে। সেই নর্দমার জলের পাশাপাশি আবর্জনাও নদীতে গিয়ে মিশছে। তবে শুধু সরকারি ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আবর্জনাই নয়, নদীতে স্থানীয় বাজার ও বাড়ির আবর্জনাও সমানভাবে মেশে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর জেরে নদীতে দূষণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবেই এ বিষয়ে পরিবেশবিদরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেচার অ্যান্ড স্টাডি (ন্যাস) গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহের বক্তব্য, ‘আবর্জনা নদীতে মেশা কখনোই উচিত নয়। তাতে জলের দূষণ বেড়ে জলজ প্রাণী তো বটেই, মানুষেরও ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।’ অরূপের সুরে অনেকেই সরব হয়েছেন।
সম্প্রতি মহানন্দার জল দূষণ নিয়ে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক হইচই হয়েছে। ওই দূষণ এতটাই বেড়েছে যে শিলিগুড়ি পুরসভা কয়েকদিন ওই জল ব্যবহার করতে বাসিন্দাদের বারণ করেছে। কোচবিহারের তোর্ষার জলও যেহেতু পরিস্রুত করে পানীয় জলের কাজে ব্যবহৃত হয় সেজন্য এখানকার নদী পরিষ্কার রাখার দাবি জোরালো হয়েছে। পুরসভার দাবি, প্রতি মাসেই পানীয় জল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে কোনও সমস্যা নেই। বর্তমানে কোচবিহার শহরে প্রায় ৬ হাজার বাড়িতে তোর্ষার পানীয় জল সরবরাহ হয়। আরও সাত হাজার বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। কোচবিহারের বাসিন্দারা এই নদীটির ওপর অনেকটাই নির্ভর করেন। সেই নদীকে কেন্দ্র করে এমন সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। তড়িঘড়ি সমস্যা মেটানোর দাবি জোরালো হয়েছে।