অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: মদ্যপ অবস্থায় সুইচ রুমের মধ্যে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন গেটম্যান। এদিকে ট্রেন এসে দাঁড়িয়ে আছে সিগন্যালের ওপারে। খোলা রয়েছে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট। ট্রেনচালক প্রায় ১০ মিনিট ধরে জোরে হর্ন দিলেও ঘুম ভাঙেনি গেটম্যানের। পরে গেটম্যানের এক সহকর্মী ওই ব্যক্তির ঘুম ভাঙিয়ে গেট বন্ধ করান। তারপর ট্রেনচালক ট্রেন এগিয়ে নিয়ে এসে সুইচ রুমের সামনে দাঁড়ান। তখন গেটম্যানের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন ট্রেনের চালক ও গার্ড।
মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ময়নাগুড়ি রোড বাজার লেভেল ক্রসিংয়ে (Mainaguri)। ডিব্রুগড় থেকে কন্যাকুমারীগামী ডাউন বিবেক এক্সপ্রেস ময়নাগুড়ি রোডে আটকে পড়ে। ঘটনার জেরে বরখাস্ত করা হয়েছে ওই গেটম্যানকে। ঘটনার জেরে ওই ট্রেনের যাত্রী ও এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। রেলের পদস্থ আধিকারিকরা ময়নাগুড়ি রোড স্টেশনে আসেন।
আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অমরজিৎ গৌতম ওই গেটম্যানের গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওই গেটম্যানের মেডিকেল চেকআপ করানো হয়েছে। তাঁকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গেটম্যান গেট বন্ধ না করলেও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থার জন্য সিগন্যাল লাল ছিল। তাই ট্রেন আগেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় বিবেক এক্সপ্রেস ওই জায়গায় প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল।’
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গেটম্যানের নাম হীরেন্দ্রনাথ রায়। আগে তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করলেও মাস তিনেক ধরে তিনি চুক্তির ভিত্তিতে রেলের গেটম্যানের কাজ করছিলেন। হীরেন্দ্রর এক সহকর্মী বলেন, কথাবার্তা অসংলগ্ন থাকায় দুপুরেই বোঝা গিয়েছিল হীরেন্দ্র মদ্যপান করেছেন। এরপর তাঁর বদলে ওই জায়গায় অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু তার আগেই এই ঘটনা। হীরেন্দ্র শুধু বিবেক এক্সপ্রেসের চালক ও গার্ডের সঙ্গেই বচসায় জড়িয়ে পড়েননি, তাঁর ঘুম কেন ভাঙানো হল, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপরেও চড়াও হন। তখন স্থানীয়রা তাঁকে উত্তমমধ্যম দেন। খবর পেয়ে এরপর পুলিশ এসে তাঁকে নিয়ে যায়।
ঘটনার সময় ওই স্থানেই ছিলেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী মুন্না বণিক। মুন্না বলেন, ‘ট্রেনটি এসে দাঁড়িয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে হুইসল দিতে থাকে। তখনও গেট খোলা থাকায় সন্দেহ হওয়ায় সুইচ রুমে গিয়ে দেখি গেটম্যান নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। অনেক ডাকাডাকি করেও তাঁর ঘুম ভাঙানো যায়নি। এরপর অন্য এক কর্মী এসে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে গেট বন্ধ করান।’ এলাকার বাসিন্দা দেবদুলাল বৈদ্য, সুবীর সাহা, অসীম বিশ্বাস, গুণধর বর্মন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখে ওই রেলগেটের দিকে এগিয়ে যান। তখন ওই গেটম্যান তাঁদের ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। দেবদুলাল বলেন, ‘এই ঘটনায় রেলের গাফিলতিই প্রকাশ্যে এসেছে।’
ঘটনার পর ট্রেনের গার্ড রেলের কন্ট্রোল রুমে গোটা বিষয়টি জানান। এর পরেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় গেটম্যানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই গেটম্যানের বিরুদ্ধে ময়নাগুড়ি রোড এলাকার বাসিন্দারা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।