উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আপনার বয়স কি ৩৩-৩৪ বছর? সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হাঁফ ধরে যাচ্ছে? আগে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাঁটলেও কোনও ক্লান্তি আসত না, কিন্তু এখন কয়েক পা হাঁটলেই যেন অস্বস্তি হয়। হয়তো আপনি ধূমপান করেন না, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ওজনও ঠিকঠাক, এমনকি ডায়াবিটিসও নেই। ভাবতে পারেন, সবই তো ঠিক আছে, অস্বস্তিবোধ হয়তো সাময়িক। এখানেই ভুল করছেন। যদি আপনি উপসর্গগুলো বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ টেস্ট করিয়ে নেন তাহলে হয়তো বড় ধরনের জটিলতা থেকে বেঁচে যেতে পারেন। লিখেছেন কার্ডিয়াক সার্জন কুণাল সরকার।
প্রথমেই বলি, জন্মগত হার্টের সমস্যার (Heart Problem) কথা। আমাদের দেশে প্রতি ২০০ জন সদ্যোজাতর মধ্যে একজনের হার্টের জন্মগত সমস্যা থাকতে পারে। যেহেতু আমরা অল্প বয়সে নিয়মিত চেকআপ করাই না, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক বড় বয়সে গিয়ে বা পরিস্থিতি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে সমস্যাগুলো চোখে পড়ে। আর কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে যে রোগটা ধরতে অনেক সময় আমাদের দেরি হয়, সেটা হল রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ বা ভালভুলার হার্ট ডিজিজ। এই জাতীয় সমস্যা না থাকলেই ভালো হত।
বাকি বেশিরভাগ সময় যে ঝামেলাটা আমাদের দুশ্চিন্তায় রাখে, সেটা হল হার্ট অ্যাটাক। আমরা ভালো আছি, দিব্যি চলছে সবটা, হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট হল, বুকে ব্যথা হল। তারপর সেটা যদি ধরতে না পারি বা তাকে পাত্তা না দিই, তাহলে সেটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গিয়ে একটা জীবনমরণ সমস্যা হয়, যাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। হার্ট অ্যাটাক তখনই হয় যখন হার্টের রক্ত চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লাই লাইন বন্ধ হয়ে যায় এবং হার্টের অনেকটা পেশির ক্ষতি হয়।
২৫-৩০ বছর আগে মনে করা হত, সাধারণত ৫০-৬০ বছরের পরেই হার্ট অ্যাটাক হয়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ৩২-৩৮ বয়সিরাও এই ধরনের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু কেন?
প্রথমত, বর্তমান জীবনযাত্রা, জীবনের চাহিদা, শারীরিক ও মানসিক স্ট্রেস এবং অল্প বয়সে পেশাগত জীবনে অত্যন্ত ব্যস্ততা, দিনে যেখানে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ছুটোছুটি করতে হচ্ছে, সেখানে বয়সের সংখ্যাটা ৩২, ৩৫, ৩৭ হলেও আমাদের জীবনযাত্রা হয়ে গিয়েছে একটা ৫০-৫৫ বছরের মানুষের মতো।
দ্বিতীয়ত, আজকের অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা কাজকর্ম, ঘর-সংসার নিয়ে প্রবল ব্যস্ত। নিউক্লিয়ার পরিবার রয়েছে। রয়েছে পারিবরিক ও পেশাগত অঙ্গীকার। সবকিছু মিলে তাঁদের নাওয়াখাওয়ার সময় নেই। কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে করতে তাঁরা জলখাবার থেকে শুরু করে রাতের খাবার অবধি কোনওমতে বাড়ির বাইরেই সেরে ফেলছেন। বাইরের খাবার মানেই বিষাক্ত নয়। কিন্তু বাইরের খাবারের মধ্যে আমরা যে ব্যালেন্স করে চলতে চাই সেগুলো আমরা পারি না।
তাই বলব বয়সের সংখ্যাটা কম হলেও বছরে এক-দু’বার রক্তপরীক্ষা এবং ইসিজি করিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিত। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সবে ৪০ বছরে এসে ঠেকলাম, এখনই কীসের টেস্ট! কিন্তু এখন যা দিনকাল তাতে করিয়ে রাখাটা ভালো। এছাড়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ডায়াবিটিসও একটা বড় কারণ। সেইসঙ্গে তরুণ পেশারদারদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা খুব বেশি।
সুতরাং, অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের ধূমপান করা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস, ঠিকমতো খাওয়াদওয়া না করা, রক্তপরীক্ষা করতে বললে আঁতে ঘা লাগার মতো বিষয়গুলো ঠিক নয়। তাঁদের প্রতি পরামর্শ, জীবনে ভালো থাকতে গেলে ধূমপান বা মদ্যপান জরুরি নয়, বরং ৪০ বছরের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালে আমাদেরও সচেতন হতে হবে।
নিঃসন্দেহে উন্নত চিকিৎসাবিজ্ঞান, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বাইপাস সব রয়েছে, কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে চ্যালেঞ্জ- ৩২, ৩৫ বা ৩৭ বছরে হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষটিকে আরও ৩০-৩৫ বছর টেনে নিয়ে যাওয়া। আর এজন্য জীবনযাপনে সংযমী হওয়া একান্ত জরুরি।

