বরুণকুমার মজুমদার, করণদিঘি: উমা বিদায়ে চারদিকে যখন বিষাদের সুর, করণদিঘির (Karandighi) সিঙ্গারদহ গ্রামে তখন উৎসবের আবহ। মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গারদহে যে সোনামতি কুম্ভরানি দুর্গার আরাধনা শুরু হয়েছে!
প্রায় দুশো বছর ধরে রাজবংশী সমাজের রীতিনীতি মেনে চলে আসছে সোনামতি কুম্ভরানি দুর্গার পুজো। প্রথা মেনে বিজয়া দশমীর পরে প্রথম মঙ্গলবার শুরু হয় এই পুজো। নিয়ম মেনে বিসর্জন হয় শনিবার। মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই পাঁচদিন বিধি মেনে পূজিত হন সোনামতি কুম্ভরানি। রীতি মেনে ষষ্ঠীতে দেওয়া হয় ছাগবলি। কুম্ভরানির আর্শীবাদ পেতে ভিড় করেন বহু মানুষ। মূলত রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষই এই পুজোয় অংশ নেন। তবে বিগতদিনে পুরোহিত প্রতিমা তৈরি করতেন। এবার প্রতিমা তৈরি করেছেন কুমোররাই।
সিঙ্গারদহের এক প্রবীণ গুণধর সিনহা বলেন, ‘কথিত রয়েছে, পাল বংশের কোনও এক বংশধর বসবাস করতেন করণদিঘির সিঙ্গারদহে। ওই বংশের এক বধূ দেবী দুর্গার দর্শনের জন্য ঘরে সাজগোজ করছিলেন। তখন স্থানীয় মহিলারা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। গৃহকর্তার কথা মতো ঘরে ঢুকে মহিলারা সোনামতিকে দেবী দুর্গা রূপে দেখতে পান। তারপরই পাল রাজপরিবারের ঘোষণা মতো দশমীর পরে প্রথম মঙ্গলবার শুরু হয় সোনামতি কুম্ভরানির পুজো।’
পুজোর সম্পাদক জয়দেব সিংহ বলেন,‘এই পুজোতেও প্রথা মেনে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী এই পাঁচদিনে চলে দেবীর আরাধনা। প্রতিবারের মতো এবারেও সপ্তমীর দিন থেকে মেলা বসছে। আশা করছি, পুজো উপলক্ষ্যে মন্দিরে দর্শণার্থীদের ভিড় হবে আশাতীত।’
পুজো কমিটির সভাপতি যদুনন সিংহ বলেন, ‘মায়ের নামে দশ একর জমি আছে। এই জমির ফসল বেচে প্রতি বছর পুজোর আয়োজন হয়। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, মায়ের আশীর্বাদে গ্রামে কোনও বিপদ ছুঁতে পারে না।’
প্রতি বছর উত্তর দিনাজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি থেকে অসংখ্য রাজবংশী মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন।

